দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সমাজে বড়দের প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের সংস্কৃতি ও নৈতিকতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

প্রাচীনকাল থেকেই বাবা-মা, দাদা-দাদি, শিক্ষক এবং অভিজ্ঞ মানুষদের সম্মান করার শিক্ষা পরিবার ও সমাজ থেকে পাওয়া যেত। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা শুধু সামাজিক সৌজন্য নয়, এটি মানবিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই মনে করছেন যে সমাজে এই মূল্যবোধ ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে বসেছে। প্রশ্ন উঠছে—বড়দের সম্মান করার বিষয়টি কি সত্যিই সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে?
আধুনিক প্রযুক্তি ও জীবনধারার পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলছে। আগে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা ছিলেন অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার, তাদের কথায় পরিবার চলত। কিন্তু আজকের প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত জ্ঞান অর্জন করছে। ফলে অনেক তরুণ মনে করছে, তারা নিজেরাই সবকিছু জানে। এর ফলে বড়দের পরামর্শের গুরুত্ব অনেক সময় উপেক্ষিত হচ্ছে।
পরিবার কাঠামোর পরিবর্তনও বড় ভূমিকা রাখছে। আগে যুগপৎ পরিবারে (Joint Family) বয়োজ্যেষ্ঠরা সবার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন। তাদের প্রতি সম্মান ও যত্ন ছিল স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এখন ছোট পরিবারে (Nuclear Family) বড়দের গুরুত্ব অনেক সময় কমে যাচ্ছে। কর্মব্যস্ত জীবনযাত্রা এবং শহরমুখী পরিবারগুলোতে বয়স্কদের একা পড়ে থাকতে হচ্ছে, যা সম্মানের জায়গাকে দুর্বল করছে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবও অগ্রাহ্য করা যায় না। আধুনিক গণমাধ্যম, ভোগবাদী সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তরুণদের অনেক সময় আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। ফলে তারা অনেক ক্ষেত্রে ধৈর্য, সহানুভূতি ও শ্রদ্ধার গুণাবলি হারাচ্ছে।
তবে বলা যায় না যে বড়দের সম্মান পুরোপুরি উঠে গেছে। এখনও পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের নানা জায়গায় তরুণদের বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা করতে শেখানো হচ্ছে। গ্রামীণ সমাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য এখনও তুলনামূলকভাবে বেশি। ধর্মীয় শিক্ষাও বড়দের সম্মান করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।
তবে এই বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না যে সামগ্রিকভাবে বড়দের সম্মান করার সংস্কৃতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর প্রতিকার হিসেবে পরিবার থেকেই শিশুদের শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে। স্কুল-কলেজে নৈতিক শিক্ষা জোরদার করা দরকার। পাশাপাশি গণমাধ্যমে বড়দের সম্মানের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।
সমাজে বড়দের সম্মান করা মানে শুধু একটি প্রথা নয়; এটি একটি মানবিক দায়িত্বও। কারণ বয়োজ্যেষ্ঠরা অভিজ্ঞতার আলো দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে চালিত করতে পারেন। তাই এই মূল্যবোধকে ধরে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। যদি তা না হয়, তাহলে সমাজে প্রজন্মের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে এবং মানবিক সম্পর্কও দুর্বল হয়ে পড়বে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org