দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের শরীর সুস্থ রাখার জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য। তবে সুষম খাদ্যের পাশাপাশি কিছু খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এর মধ্যে চিনি ও লবণ অন্যতম। তবে কেনো চিনি ও লবণ বেশি খাওয়া মোটেও উচিত নয়? আজ সেটি জেনে নিন।

দৈনন্দিন জীবনে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য চিনি এবং লবণ ব্যবহার করা হলেও অতিরিক্ত সেবনে এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা তাই দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চিনি ও লবণ সীমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
চিনি
চিনি বেশি খাওয়ার ক্ষতি অনেক। চিনি হলো খালি ক্যালোরি, যা শরীরে শক্তি দিলেও কোনো ভিটামিন, খনিজ বা পুষ্টি উপাদান দেয় না। অতিরিক্ত চিনি খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে স্থূলতা বা ওজন বেড়ে যায়। এর ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। মিষ্টি খাবার, সফট ড্রিংকস কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে আমরা অজান্তেই প্রচুর চিনি গ্রহণ করি, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া অতিরিক্ত চিনি দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগও সৃষ্টি করে।
লবণ
লবণ বেশি খাওয়াও ক্ষতিকর। লবণে সোডিয়াম থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও সীমা অতিক্রম করলে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে। বেশি লবণ খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, কিডনির রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে মানুষ গড়ে দৈনিক প্রয়োজনের দ্বিগুণ লবণ গ্রহণ করে থাকে। এতে করে নীরবে নানা জটিল রোগ দেহে বাসা বাঁধে।
অতিরিক্ত চিনি ও লবণ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর চাপ সৃষ্টি করে। যেমন— চিনি ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, আর লবণ কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
তবে চিনি ও লবণ সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ শরীরের জন্য অল্পমাত্রায় দুটোই প্রয়োজন। যেমন, লবণ শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, আর চিনি তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়। কিন্তু এগুলো সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ ও মোট ক্যালোরির ১০ শতাংশের বেশি চিনি খাওয়ার বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছে।
তাই বলা যায়, সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে খাবারে পরিমিত চিনি ও লবণের ব্যবহার অপরিহার্য। অতিরিক্ত সেবন থেকে বিরত থাকলেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতার মতো ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য এখন থেকেই চিনি এবং লবণ সীমিত করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org