দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পেয়ারা একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর জনপ্রিয় ফল, যা বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে সহজলভ্য। সাধারণত শীত এবং বর্ষা মৌসুমে পাওয়া গেলেও বর্তমানে সারা বছরই চাষ হচ্ছে।

পেয়ারা শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং মানব শরীরের জন্য বহুমুখী উপকারে ভরপুর একটি ফল। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
# পেয়ারা ভিটামিন সি-এর এক চমৎকার উৎস। গবেষণায় দেখা যায়, পেয়ারায় কমলার তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা সর্দি-কাশি বা সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়া এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, ফলে ত্বক মসৃণ এবং তরুণ থাকে।
# পেয়ারা হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা খাদ্যআঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেয়ারা খেলে পাকস্থলী পরিষ্কার থাকে এবং গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের ঝুঁকি কমে। শিশু ও বয়স্কদের জন্য পেয়ারা সহজ পাচ্য একটি ফল।
# পেয়ারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে চিনি বা ক্যালোরির পরিমাণ তুলনামূলক কম এবং খাদ্যআঁশ বেশি থাকায় রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় না। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা একটি নিরাপদ ফল।
# পেয়ারা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এতে থাকা পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
# পেয়ারা চোখের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এতে ভিটামিন এ রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং রাতকানা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখকে বয়সজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
# পেয়ারা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে ফ্যাট ও ক্যালোরি কম থাকায় এটি একটি আদর্শ ডায়েট ফল। যারা ওজন কমাতে চান তারা স্ন্যাকস হিসেবে পেয়ারা খেলে উপকৃত হতে পারেন।
এ ছাড়াও পেয়ারা শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এতে থাকা লাইকোপেন এবং ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যানসার সৃষ্টিকারী ফ্রি-র্যাডিক্যাল ধ্বংস করে।
তাই বলা যায়, পেয়ারা একটি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর ফল, যা শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী। নিয়মিত পেয়ারা খেলে শরীর রোগমুক্ত, কর্মক্ষম এবং সতেজ থাকে। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই ফল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org