দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুষ্ক ত্বক একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা সারা বছরজুড়েই অনেকের মধ্যে দেখা যায়। বিশেষ করে শীতকালে কিংবা আর্দ্রতা কম থাকা পরিবেশে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকের আর্দ্রতা বা ময়েশ্চার ধরে রাখার ক্ষমতা কমে গেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, ফেটে যায় ও চুলকানি সৃষ্টি করে। এজন্য ত্বকের প্রাকৃতিক তেল এবং পানির ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, শুষ্ক ত্বক হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ত্বকের উপরের স্তর থেকে অতিরিক্ত তেল ও পানি হারিয়ে যাওয়া। দীর্ঘ সময় গরম পানি দিয়ে গোসল করা, সাবান বা ডিটারজেন্টের অতিরিক্ত ব্যবহার, ধুলোবালি ও দূষণের সংস্পর্শে থাকা, বয়স বৃদ্ধি এবং পুষ্টিহীনতা—সবই শুষ্ক ত্বকের জন্য দায়ী হতে পারে। এ ছাড়াও, ভিটামিন এ, ই, সি এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবও ত্বককে রুক্ষ করে তোলে।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে প্রথমেই জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে। প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফলমূল, সবজি, বাদাম ও মাছ রাখলে ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর। গোসলের পরপরই ত্বক সামান্য ভেজা থাকা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা অনেকক্ষণ ধরে রাখা যায়। নারকেল তেল, জলপাই তেল বা অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, অ্যালকোহলযুক্ত বা সুগন্ধিযুক্ত লোশন এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো ত্বক আরও শুষ্ক করে দেয়।
পরিবেশের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে শীতকালে। গরম পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয় না। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও শুষ্ক ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়া মানে শুধু বাহ্যিক যত্ন নয়, বরং সঠিক পুষ্টি, নিয়মিত যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের সমন্বয়। নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বক থাকবে কোমল, মসৃণ ও উজ্জ্বল—যা সামগ্রিক সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
শুষ্ক ত্বকের সমস্যা সামান্য মনে হলেও, উপেক্ষা করলে তা ফাটল, সংক্রমণ কিংবা প্রদাহের কারণ হতে পারে। তাই গবেষণালব্ধ উপদেশ অনুযায়ী সঠিক যত্ন এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনাই শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধ ও সুস্থ রাখার মূল উপায়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org