দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। এটি মূলত Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত একটি প্রাণঘাতী রোগ, যা দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়।
টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকা অন্যতম কার্যকর উপায় হলেও এখনো দেশের অনেক মানুষ এই টিকা নেওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। এই সন্দেহের পেছনে রয়েছে সামাজিক, মানসিক ও তথ্যগত বিভিন্ন কারণ।
তথ্য ও সচেতনতার অভাব
তথ্য ও সচেতনতার অভাব অন্যতম প্রধান কারণ। গ্রামের মানুষ কিংবা নিম্নশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো টিকা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তারা অনেক সময় মনে করেন, টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া বা জ্বর হওয়া মানে টিকা ক্ষতিকর। প্রকৃতপক্ষে, এসব প্রতিক্রিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও তারা একে ভয় পেয়ে টিকা নিতে অনীহা প্রকাশ করে।
অবিশ্বাস ও গুজব
অবিশ্বাস ও গুজবের প্রভাবও বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় টিকা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে—যেমন “টিকা নিলে বন্ধ্যাত্ব আসে” বা “বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ক্ষতিকর টিকা দেয়।” এসব ভিত্তিহীন তথ্য অনেক মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করে, যার ফলে টিকা কর্মসূচির প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায়।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও অতীতের অভিজ্ঞতাও কিছুটা প্রভাব ফেলে। অনেক সময় টিকা নেওয়ার পর সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে স্বাস্থ্যকর্মীরা যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে না পারায় মানুষ আতঙ্কিত হয়। আবার কোথাও টিকার সঠিক সংরক্ষণ না হলে কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা জনমনে টিকার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।
ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার
ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারও এই সন্দেহের একটি উৎস। কিছু মানুষ এখনো বিশ্বাস করে যে রোগ-ব্যাধি আল্লাহর ইচ্ছায় আসে ও যায়—তাই টিকা নেওয়া অপ্রয়োজনীয়। এই ধরনের ধর্মীয় ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত করে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে এখন দেশব্যাপী টিকা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। গণমাধ্যম এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে টিকার উপকারিতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো হলে ধীরে ধীরে এই সন্দেহ কমে আসছে।
টাইফয়েড টিকা নিয়ে জনগণের সন্দেহ দূর করতে হলে শুধুমাত্র টিকা প্রদান নয়, বরং টিকা বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রচার, গুজব মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে টিকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরলে মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হবে ও ভবিষ্যতে টাইফয়েডসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
উল্লেখ্য, দেশে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই টাইফয়েডের টিকা আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রদান করা হবে।
>>>>>>>>>>>>>>
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org
This post was last modified on অক্টোবর ১৫, ২০২৫ 2:26 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং ঠাণ্ডা হাওয়ার কারণে মুখের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পরিচালিত পারসিভিয়ারেন্স রোভার সম্প্রতি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বাস্থ্য সচেতন জীবনের অন্যতম শর্ত হলো সঠিক খাবার বেছে নেওয়া।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের দক্ষিণি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা তার জীবনের অভিজ্ঞতার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এক বাসিন্দা তার বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন-“ফ্লোটিং…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২…