দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাচীনকাল থেকেই মধু ও রসুনকে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এ দু’টি উপাদান শুধু রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিতেই নয়, বরং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাও প্রমাণ করেছে যে মধু এবং রসুন একসঙ্গে খেলে এর উপকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
প্রথমেই মধুর কথা বলা যাক। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান, যা শরীরের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি গলা ব্যথা, কাশি ও সর্দির মতো সাধারণ রোগে দারুণ কার্যকর। পাশাপাশি মধু হজমশক্তি বাড়ায়, ত্বক উজ্জ্বল রাখে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা শরীরকে দ্রুত শক্তি জোগায়, যা কৃত্রিম চিনির বিকল্প হিসেবে নিরাপদ।
অপরদিকে রসুনে আছে অ্যালিসিন নামক এক শক্তিশালী যৌগ, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত রসুন খেলে ঠান্ডা, ফ্লু, এমনকি কিছু ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা যায়, মধু এবং রসুন একসঙ্গে খেলে শরীরে একটি “ডিটক্স” প্রভাব সৃষ্টি হয়, যা টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে এক চা চামচ মধুর সঙ্গে একটি কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে এটি হজমতন্ত্র পরিষ্কার করে, লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং পেটের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়াও এটি বিপাকক্রিয়া সক্রিয় করে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও মধু এবং রসুন উপকারী, কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। রসুনের সালফার যৌগ ও মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়াও এই মিশ্রণ রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীরের কোষগুলোর ক্ষয়রোধ করে বার্ধক্য প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
তবে অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন বা মধু খাওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে যাদের গ্যাস্ট্রিক বা অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। প্রতিদিন সকালে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলেই এর উপকার পাওয়া যায়।
মধু এবং রসুন প্রকৃতির এক অসাধারণ উপহার, যা ওষুধ ছাড়াই শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে। নিয়মিত এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করলে এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং সার্বিকভাবে জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই সুস্থ জীবনধারার অংশ হিসেবে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে মধু এবং রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org