দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের জীবনে বাবা-মা শুধু অভিভাবক নন, বরং পরিবারের এক অটুট বন্ধনের প্রতীক। তাদের উপস্থিতিতে ভাই-বোনদের মধ্যে একধরনের ঐক্য, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ বজায় থাকে।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, মা-বাবার মৃত্যুর পর সেই সম্পর্কের উষ্ণতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়, ভাই-বোনদের মধ্যে সৃষ্টি হয় দূরত্ব, এমনকি বিরোধও। এই মানসিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে নানা কারণ, যা বোঝা ও সমাধান করা আজকের সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মা-বাবার অনুপস্থিতিতে পরিবারের মূল সংযোগের বন্ধনটি দুর্বল হয়ে যায়। বাবা-মা ছিলেন ভাই-বোনদের একত্রে রাখার কেন্দ্রবিন্দু। তাদের মৃত্যু হলে পরিবারের সেই কেন্দ্রটি হারিয়ে যায়, যে কারণে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হয়। আগে যেসব বিষয়ে মা-বাবা পরামর্শ দিতেন বা সমস্যা মিটিয়ে দিতেন, এখন সেগুলো অমীমাংসিত থেকে বিরোধে রূপ নেয়।
সম্পত্তি এবং আর্থিক বিষয়কে ঘিরেও সম্পর্কের অবনতি ঘটে। অনেক পরিবারে উত্তরাধিকার কিংবা জমি-বাড়ি ভাগাভাগি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, অবিশ্বাস বা স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়। যে কারণে ভাই-বোনদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। কেও কেও মনে করেন, তাদের প্রাপ্য অংশ কম দেওয়া হয়েছে বা কেউ বেশি সুবিধা নিচ্ছে। এই ক্ষোভ ক্রমে সম্পর্কের দেয়াল তুলতে শুরু করে।
এইক্ষেত্রে মানসিক যোগাযোগের অভাবও বড় একটি কারণ। মা-বাবা বেঁচে থাকলে সবাই নিয়মিত দেখা করত, খবর নিত, একত্র হতো। কিন্তু মৃত্যুর পর যোগাযোগ কমে যায়। কেও কেও নিজের সংসার এবং পেশাগত জীবনে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে ভাই-বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সময় পায় না। ধীরে ধীরে সেই মানসিক দূরত্ব বাস্তব দূরত্বে রূপ নেয়।
স্বামী-স্ত্রী কিংবা পারিবারিক প্রভাবও সম্পর্কের মাঝে প্রাচীর তৈরি করতে পারে। কখনো কখনো সঙ্গীর মতামত, ভুল ধারণা বা বাইরের কথায় প্রভাবিত হয়ে ভাই-বোনেরা একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে পড়ে। এই অবিশ্বাসই ভালোবাসাকে ম্লান করে দেয়।
আবেগিক অভাব এবং একাকীত্বের প্রভাবও উপেক্ষা করা যায় না। মা-বাবার মৃত্যু শুধু একটি মানুষ হারানো নয়, বরং একটি আবেগময় আশ্রয় হারানো। অনেক সময় শোক কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় কেউ নিজেকে একা গুটিয়ে নেয়, আবার কেও ক্ষোভ বা দুঃখ প্রকাশে আগ্রাসী হয়ে ওঠে। যে কারণে সম্পর্কের সেতু ভেঙে যায়।
এই দূরত্ব কমাতে প্রথমেই দরকার পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহমর্মিতা। ভাই-বোনদের উচিত নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, বিশেষ দিনগুলো একসঙ্গে উদযাপন করা এবং পরস্পরের জীবনে আগ্রহ দেখানো। সম্পত্তি কিংবা আর্থিক বিষয় নিয়ে মতভেদ হলে আইনগত উপায়ে সমাধান খোঁজা ভালো, ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট করা নয়।
মা-বাবা চলে গেলে তারা শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থাকলেও তাদের স্মৃতি এবং শিক্ষা আমাদের মধ্যেই বেঁচে থাকে। তাই ভাই-বোনদের উচিত সেই সম্পর্কের উত্তরাধিকারকে টিকিয়ে রাখা। পারিবারিক ঐক্য এবং ভালোবাসাই হলো প্রকৃত সম্পদ- যা হারিয়ে গেলে কোনো কিছুর দ্বারাই তখন তা পূরণ করা সম্ভব নয়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org