দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অস্ট্রেলিয়ার ক্রান্তীয় রেইনফরেস্টে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন এক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেখানকার গাছপালা কার্বন শোষণের চেয়ে বেশি কার্বন নির্গত করছে!

কার্বন নির্গতকারী বিশ্বের প্রথম রেইনফরেস্ট বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার ক্রান্তীয় রেইনফরেস্টকে। সাধারণত রেইনফরেস্টকে কার্বন সিঙ্ক হিসেবেই গণ্য করা হয়। মৃত গাছের মাধ্যমে নির্গত কার্বনকে নতুন গাছের মাধ্যমে পুষিয়ে নিয়ে নির্গমণের চেয়ে বেশি কার্বন শোষণ করে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বনাঞ্চলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, চরম তাপমাত্রার কারণে নতুন গাছ বৃদ্ধির চেয়ে বেশিসংখ্যক গাছের মৃত্যু ঘটছে। এতে কার্বনই নির্গত হচ্ছে বেশি। নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা।
ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী হান্না কার্লে বলেছেন, ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের আচরণ বদলে গেছে। নতুন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। মৃত গাছের কাণ্ড এবং শাখা, যা ‘উডি বায়োমাস’ নামে পরিচিত। এইসব কার্বন শোষণের পরিবর্তে কার্বন নির্গমণ করছে।
বিজ্ঞানী কার্লে বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে নির্গত কিছু কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে বনাঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। সেই প্রভাব বর্তমানে হুমকির মুখে। গত কয়েক দশকে গাছের মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, যেমন- চরম তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলের শুষ্কতা এবং খরার কারণে গাছের মৃত্যুর হার বাড়ছে।
কুইন্সল্যান্ডের ২০টি বনাঞ্চলের ৪৯ বছরের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নতুন গবেষণার তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে আরও অনেক বেশি গাছ মারা যাচ্ছে। নতুন গাছের বৃদ্ধি কঠিন হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার আর্দ্র ক্রান্তীয় বনগুলোই বিশ্বব্যাপী প্রথম এমন বন, যা এমন পরিবর্তনও প্রদর্শন করছে। এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আরেক বিজ্ঞানী প্যাট্রিক মেয়ারও গবেষণার ফলাফলকে খুবই উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সম্ভবত সব ক্রান্তীয় বন একই রকমভাবে প্রতিক্রিয়াও দেখাবে।
উল্লেখ্য, মাথাপিছু হিসেবে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দূষণকারী দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া। সম্প্রতি তার নতুন কার্বন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রাও ঘোষণা করেছে। ২০০৫ সালের মাত্রার তুলনায় আগামী দশকে কমপক্ষে ৬২ শতাংশ নির্গমণ কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটি। অস্ট্রেলিয়া জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ক্রমাগত নির্ভরতার জন্যই বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে রয়েছে। সরকার দেশটির অন্যতম বৃহৎ গ্যাস প্রকল্প উডসাইডের নর্থ ওয়েস্ট শেলফকেও আরও ৪০ বছরের জন্য পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। গত মাসে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যেই দেড় ডিগ্রি সেলসিয়ারের বেশি উষ্ণতায় পৌঁছেছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org