দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হাঁটুর ব্যথা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অন্যতম সাধারণ শারীরিক সমস্যা। বয়স, পেশা, জীবনধারা কিংবা আঘাত- বিভিন্ন কারণে হাঁটুর ব্যথা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা গবেষণা বলে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাঁটুর ব্যথার প্রকোপ প্রতি বছরই বাড়ছে, বিশেষ করে যাদের শারীরিক পরিশ্রম বেশি বা দীর্ঘসময় বসে থাকা অভ্যাস রয়েছে। হাঁটুর ওপর অতিরিক্ত চাপ, জয়েন্টের ক্ষয় কিংবা প্রদাহ- সব মিলিয়েই এই ব্যথা ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
# অস্টিওআর্থ্রাইটিস হাঁটুর ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুর কার্টিলেজ নরম হয়ে ক্ষয় হতে থাকে। গবেষণা অনুযায়ী, ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের প্রায় ৩০–৪০ শতাংশ কোনো না কোনো মাত্রায় অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভোগেন। কার্টিলেজ ক্ষয় হলে হাড় একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণ সৃষ্টি করে, ফলে ব্যথা, ফোলা এবং হাঁটা-চলায় অস্বস্তি দেখা দেয়।
# অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর ব্যথা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। শরীরের ওজন যত বাড়ে, হাঁটুর ওপর চাপও তত বেশি পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত প্রতিটি কিলোগ্রাম ওজন হাঁটুর ওপর কমপক্ষে তিনগুণ বেশি চাপ সৃষ্টি করে। এই অতিরিক্ত চাপে জয়েন্ট দ্রুত ক্ষয় হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে হাঁটুর ব্যথা স্থায়ী রূপ নিতে পারে।
# লিগামেন্ট বা মিনিসকাস ইনজুরি হাঁটুর ব্যথার আরেক উল্লেখযোগ্য কারণ। খেলাধুলার সময় হঠাৎ মোচড় খাওয়া, সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে ভুলভাবে পা পড়া বা দুর্ঘটনায় হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। চিকিৎসা গবেষণা দেখায়, যারা নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট বা দৌড়ের মতো প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নেন, তাদের মধ্যে এই ধরনের ইনজুরি সাধারণ।
# রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নামক অটোইমিউন রোগও হাঁটুর প্রদাহ এবং ব্যথার জন্য দায়ী হতে পারে। এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের জয়েন্টকে আক্রমণ করে, ফলে ব্যথা, ফোলা এবং জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়। এ রোগ সাধারণত মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়।
তা ছাড়াও ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, দীর্ঘসময় হাঁটু-মোড়া অবস্থায় কাজ করা, নিয়মিত ভারী ওজন তোলা, খারাপ ধরনের পাদুকা ব্যবহার এবং শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া (গাউট) হাঁটুর ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। আধুনিক গবেষণায় আরও দেখা যায়, দীর্ঘসময় বসে থাকা জীবনধারা (Sedentary lifestyle) হাঁটুর পেশিকে দুর্বল করে, ফলে ব্যথা সহজেই বাড়তে পারে।
হাঁটুর ব্যথা কোনো সাধারণ সমস্যা নয়; এর পেছনে লুকিয়ে থাকে নানাবিধ শারীরিক, হরমোনজনিত এবং জীবনধারাগত কারণ। তাই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ, সঠিক ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে হাঁটুর ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org