ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ ২০১২ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। গত দুদিন ধরে এই ফলাফল নিয়ে কতনা জল্পনা-কল্পনা! কে কেমন ফল করবে, কার ভাগ্যে কি আছে এমন নানা ধরনের কথা-বার্তা শোনা গেছে। কিন্তু আজ থেকে আবার শুরু হয়ে গেছে, কে কোন কলেজে ভর্তি হবে, কে কোন কলেজে সুযোগ পাবে, না পাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
বাবা-মা অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েকে পড়া-লেখা করান। সবাই আশা করে ভালো ফলাফলের জন্য। এবার এসএসসি রেজাল্ট বের হওয়ার পর দেখা গেলো, শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো ফলাফল করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২ হাজার ২১৫ জন শিক্ষার্থী। যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা সবাই চাইবে ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য। রাজধানী ঢাকাতে নামকরা যেসব কলেজ রয়েছে সেগুলোর আসন কত তা আগে দেখা দরকার। যদি জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা ভর্তি যুদ্ধে নেমে যায় তাহলে আর সব শিক্ষার্থীদের কি অবস্থা হবে একবার তাহলে ভেবে দেখুন?
এবার আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধিনে ১৪ লাখ ১২ হাজার ৩৭৯ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে পাস করেছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন। সেই হিসাব অনুযায়ী সব বোর্ড মিলে গড় পাসের হার ৮৬.৩৭%।
বোর্ড ওয়ারী হিসাব ছিল, ঢাকা বোর্ড ৮৫.৯৫ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ড ৮৮.৩৩ শতাংশ, সিলেট বোর্ড, ৯১.৭৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ড ৭৮.৯৬ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ড ৮৫.৬৪ শতাংশ, বরিশাল বোর্ড ৮৬.৯৬ শতাংশ, যশোর বোর্ড ৮৭.১৬ শতাংশ ও দিনাজপুর বোর্ড ৮৭.১৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে এবারের এসএসসিতে। হিসাব অনুযায়ী সিলেট বোর্ড সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে, পাশের হার ৯১.৭৮ শতাংশ। আর সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে চট্টগ্রাম বোর্ড, পাসের হার ৭৮.৯৬ শতাংশ।
পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের হিসাব করলে দেখা যাবে ভর্তির জন্য ব্যাপক খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। কারণ এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যেমন অনেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সাধারণ জিপিএ-৫ এর তুলনায় যেহেতু তাদের ফলাফল আরও ভালো তাই ভালো কলেজগুলোতে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে।
একাদশ শ্রেণীতে আসন কত
একাদশ শ্রেণীতে আসন সংখ্যা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত দুই বছর দুই ধরনের ঘোষণা দিয়েছে। ২০১০ সালের এসএসসির ফলাফলের পর তারা বলেছে, কলেজে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৯টি। ২০১১ সালে এসে বলেছে এই সংখ্যা ১৭ লক্ষাধিক। আবার ২০১১ সালে এই ঘোষণা দেয়ার পর মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসলে আসন রয়েছে আট লাখ ১০ হাজার। মন্ত্রণালয় এভাবে ‘স্ট্যান্টবাজি’ করার জন্য আসন সংখ্যা নিয়ে গোলকধাঁধা তৈরি করে। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষামন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ভর্তির আসনের কোন সংকট নেই। সংকট যা তা হল ভালো কলেজে ভর্তির। তিনি আরও বলেন, সবাই ভর্তি হতে পারবে। কেও ভর্তি বঞ্চিত হবে না।
প্রসঙ্গত, মন্ত্রণালয়ের ওই নথি থেকে জানা যায়, মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণীতে আসন রয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার, আর কারিগরিতে রয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৫৮৫টি।
ভর্তি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা টেনশন
ভালো পাসের পর সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণদের এবার শুরু হয়েছে ভর্তির টেনশন। একটি ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার পূর্বশর্ত ভালো ফল। ভালো ফলও হয়েছে, কিন্তু ভর্তি কি নিশ্চিত- এ প্রশ্নই এখন ফিরছে শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকদের মাঝে। আর এ কারণে ভালো ফলের পর মুখে যে তৃপ্তির হাসি ফুটেছিল, একদিনের মাথায়ই যেন সেই হাসি ম্লান হয়ে গেছে। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন। এর মধ্যে এসএসসিতে পাস করেছে নয় লাখ চার হাজার ৭৫৬ জন। এ ছাড়া দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছে দুই লাখ ৪১ হাজার ৫৭২ জন এবং কারিগরি বোর্ডে ৭৩ হাজার ৫৬৬ জন। সাধারণত ফি বছরই মাদ্রাসা ও কারিগরি থেকে এসএসসি পাসের পর বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী সাধারণ শিক্ষায় কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। আর এক্ষেত্রে জিপিএ-৫ এবং জিপিএ-৪ বা মধ্যমানের শিক্ষার্থীদেরই বেশি ভিড় দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে স্কুলের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৬৫ হাজার ২৫২ জনসহ মধ্যমানের শিক্ষার্থীরাও যদি ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের কলেজে ভিড় করে ভর্তির জন্য, তাহলে ভর্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকটই অপেক্ষা করছে। আর এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য সংকট বেশি বলে মনে করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ অবস্থায়ই মেধাবীদের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হবে। এক্ষেত্রে জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। আর মধ্যম সারির জিপিএপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তো ভোগান্তির শেষ নেই। ফলে সব মিলিয়ে ভর্তি নিয়ে টেনশন থাকছেই। এ অবস্থায় দেশের নামি-দামি বিভিন্ন কলেজে আসন বৃদ্ধি কিংবা ডাবল শিফট খোলা, অথবা যেসব কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক নেই সেসব কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক খোলাসহ স্কুলগুলোতে একাদশ শ্রেণী খোলার ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভর্তির সময় সীমা
একাদশ শ্রেণীর নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে ১২ মে। চলবে ৬ জুন পর্যন্ত। বেশ কিছু কলেজে এবার ভর্তির আবেদন এসএমএসে গ্রহণ করা হবে। ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের ক্ষেত্রে যাদের ফল পরিবর্তন হবে তাদের জন্য ভর্তির আবেদন এসএমএসে গ্রহণ করার শেষ তারিখ ১৪ জুন। বিলম্ব ফি ছাড়া ও বিলম্ব ফিসহ ভর্তি ও ডিডি করার শেষ তারিখ যথাক্রমে ২৮ জুন ও ১২ জুলাই। আর ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই।
মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একাদশ শ্রেণীতে ৬০০ এর বেশি আসন রয়েছে এমন কলেজে অনলাইনে ভর্তি বাধ্যতামূলক। আর ৩০০ এর অধিক আসন থাকা কলেজেও (ইচ্ছা করলে) অনলাইনে ভর্তি করা যাবে। ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র ফরম ও ভর্তি ব্যবস্থাপনার ব্যয় বাবদ এবার ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফি-এর অতিরিক্ত কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবে না এবং সব ফি রসিদের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করলে কি শাস্তি দেয়া হবে তা বলা হয়নি।