দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘বদর বাহিনী’র নেতৃত্বদানকারী জামাত নেতা পলাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আজ রোববার আদালত এ রায় ঘোষণা করে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ রোববার জনাকীর্ণ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগের সবগুলোতেই দুই আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকার করার নির্দেশ দেন বিচারক।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করে। সকাল ১১টায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর ১৫৪ পৃষ্ঠার এই রায়ের ৪১ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসারের প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। দ্বিতীয় অংশ পড়েন ট্রাইব্যুনালের অপর বিচারক মো. মুজিবুর রহমান মিয়া। এরপর ট্রাইব্যুনাল প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সাজা ঘোষণা করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঊষালঘ্নে দেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবী নিধনের প্রধান দুই হোতা সেই সময়ে ‘বদর বাহিনী’র নেতৃত্বদানকারী জামাত নেতা পলাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এজলাস কক্ষে উপস্থিত সাংবাদিকদের রোববার রায় দেয়ার বিষয়টি জানানো হয় গত বৃহস্পতিবার। এই মামলায় বিচারকাজ শেষ হওয়ার প্রায় ৩১ দিনের মাথায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হলো। এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে জানিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলায় যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমান, অন্যদিকে আসামিদের অনুপস্থিতিতে মামলা পরিচালনা করেন রাষ্ট্রের খরচে নিযুক্ত দুই আইনজীবি আব্দুস শুকুর খান ও সালমা হাই টুনি। আসামীদের পক্ষের আইনজীবি সালমা হাই টুনি গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, তার মক্কেল বেকসুর খালাস পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।
১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশায় স্বাধীনতার ঠিক আগে ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের অনুপস্থিতিতেই চলতি বছরের ২৪ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক ১১টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আশরাফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বেজড়া ভাটরা (চিলেরপাড়) গ্রামে। আর চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বাড়ি ফেনীর দাগনভুঞার চানপুরে। বর্তমানে আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মাঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে পলাতক রয়েছেন।
এই মামলার দুই তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ২৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৫ জুলাই থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় কোনো সাফাই সাক্ষী পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল। এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশায় স্বাধীনতার ঠিক আগে ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ আলবদর বাহিনীর ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান। আর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’। ওই সময় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষক, ৬ জন সাংবাদিক ও ৩ জন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেন বলে অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। তারা দুজনেই জামাতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন।
চলতি বছরের ২ মে আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। সম্ভাব্য ঠিকানায় তাদের পাওয়া যায়নি বলে প্রসিকিউশন বিভাগ জানানোর পর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে দুটি জাতীয় দৈনিকে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১০ দিনের মধ্যে আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়। উলিস্নখিত সময়ের মধ্যে তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের পড়্গে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের খরচে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়।