দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে অনেক ধরনের হ্রদ রয়েছে। এ সমস্ত হ্রদ নিয়ে হয়তো আমাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। কিন্তু আজ যে হৃদের কথা তুলে ধরা হবে সেটি এক অশুভ হৃদ।
দৃশ্যটি এমন- চারপাশে মাটি আর মাঝে বড়সড় জলাশয় এমন দৃশ্যই হচ্ছে হ্রদ। হ্রদ উপসাগর বা সাগরের মতো কোনো মহাসমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। কাজেই এখানে জোয়ার ভাটা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। সব সময় হ্রদের পানি একই রকম থাকে। একই রকম স্থির। তবে বৃষ্টিপাত কিংবা হ্রদে এসে মিলিত হওয়া নদী বা জলধারার কারণে হ্রদের পানি কম-বেশি হতে পারে। দুনিয়ায় নানা রকম হ্রদ আছে। কোনোটা স্বাদু পানির হ্রদ, কোনোটা নোনা পানির হ্রদ। তবে ক্যামেরুনের নিয়স হ্রদের মতো কোনোটাই নয়। দুনিয়ায় নিয়সের মতো অশুভ হ্রদ আর দ্বিতীয়টি নেই। ক্যামেরুনের উত্তর-পশ্চিমের হ্রদ এই নিয়স। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার আর সর্বোচ্চ প্রস্থ ১.২ কিলোমিটার। আয়তন দেড় বর্গকিলোমিটারের সামান্য একটু বিছানার কাছে গেলাম। আমার শরীর অবশ হয়ে আসছিল। বসে পড়লাম মাটিতে। ততক্ষণে আমার মেয়েটি চলে গেছে অজানা দেশে। যে দেশ থেকে কেউ ফেরে না।’
১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট এমন ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল নিয়স হ্রদ। হ্রদ থেকে বেরোনো গ্যাসে বিষক্রিয়ায় এক রাতে মারা গিয়েছিল ১৭৪৬ জন মানুষ। জোসেফ সেই ভয়াবহ ঘটনার হাত থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া মানুষদের একজন। স্থানীয়ভাবে হ্রদটি অশুভ হিসেবে পরিচিত। এটিকে নিয়ে বহু লোমহর্ষক লোককথা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত আছে। স্থানীয় মানুষদের ধারণা, এই হ্রদে এক অশুভ আত্মা বাস করে যে কিনা প্রায়ই হ্রদের আশপাশে বসবাসকারী মানুষজন মেরে ফেলে। আর এই কিংবদন্তীর পেছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ ঘটনা। এই হ্রদটি ৪০০ বছর আগে এক আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের উপর সৃষ্টি হয়েছিল। আর এ ধরনের হ্রদে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। নিয়স হ্রদের পানি অদ্ভুতভাবে অত্যন্ত স্থির। এখানে বায়ু চলাচলের ফলে পানিতে ঢেউ ওঠে না বললেই চলে। যে কারণে হ্রদে জমে থাকা গ্যাস বের হতে পারে না পানি থেকে। এর ফলে পুরো হ্রদটি এক বিরাট গ্যাস চেম্বার বা প্রকোষ্ঠের মতো কাজ করে- যার ভেতর গ্যাসের চাপ অনেক বেশি।
হ্রদের যতই গভীরে যাওয়া যায় ততই গ্যাসের চাপ বাড়তে থাকে। প্রতি গ্যালন হ্রদের পানিতে পাঁচ গ্যালন কার্বন ডাই অক্সাইড মিশে আছে। আর পদার্থবিজ্ঞানীদের মতে, পুরো হ্রদটি কাজ করে বিশাল এক টাইম বোমার মতো। ১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট। সেদিন হ্রদে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছিল। হঠাৎ করেই হ্রদের পানি ঝর্ণা আকারে ৩০০ ফুট ওপরে উঠে গেল। খুব সম্ভবত হ্রদের তলদেশে ভূমিধস কিংবা অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। যেন হ্রদে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। সবচেয়ে আতঙ্কের ছিল পানির সাথে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের উদগীরণ। টানা ২০ সেকেন্ড ধরে ১.২ ঘন কিমি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গ্যাস। গ্যাসের কারণে হ্রদের আশেপাশে বসবাসকারী কারোই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল না। নিয়স হ্রদের কাছে বসবাসকারী ৮০০ জন লোকের মধ্যে মাত্র ৬ জন বেঁচে যায়। তাও তারা বাইকে করে দ্রুত সে এলাকা ত্যাগ করাতে বেঁচে যায়। পুরো এলাকা জুড়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। সে যেন এক মহাপ্রলয়। ধোঁয়ার মেঘ হ্রদ থেকে ২৫ কিমি দূরে ছড়িয়ে পড়ে।
যারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ঘরের বারান্দায় বা দরজা খুলে বের হয়ে আসে, তারা সাথে সাথেই সেখানে মারা যায়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হ্রদের আশপাশের গ্রামগুলোতে বসবাসকারী ১৭৪৬ জন মানুষ আর ৩২০০ গবাদিপশু সাথে সাথেই মারা পড়ে। হ্রদের পানি মুহূর্তে পরিষ্কার নীল রঙ থেকে গাঢ় লাল রঙ ধারণ করে, কারণ হ্রদের তলদেশ থেকে আয়রন বা লোহা ভেসে উঠছিল। এ ঘটনার পরে হ্রদটিকে গ্যাস মুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। যদিও সেটা অপ্রতুল। বিশেষজ্ঞদের আশংকা- ১৯৮৬ সালের ঘটনা আবারও যে কোনো সময় ঘটতে পারে। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর অনলাইন।