দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরমাণু বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সামপ্রতিক সময়ের উদ্যোগ বিশ্ববাসীকে আশান্বিত করছে। ইরানের পরমাণু নিয়ন্ত্রণের এই চুক্তিও সে ইঙ্গিতই বহন করছে। তবে ইসরাইল এটিকে একটি ঐতিহাসিক ভুল হিসেবেই দেখছে।
বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন সে কথা যেমন সত্য। আবার পক্ষান্তরে নতুন করে তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথও তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন। আর তাই ইরানের পরমাণু চুক্তিকে বিশ্ববাসী এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবেই দেখছে। কারণ যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরান পশ্চিমা বিশ্বের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিল তা নিয়ে একটি সমঝোতামূলক চুক্তি হয়েছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর বলে পরিচিত দেশগুলোর সঙ্গে এ চুক্তির ফলে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত নতুন কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না এটা অন্তত নিশ্চিত হয়েছে।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে অতি মূল্যবান ধাতব পদার্থসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৭০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যে অবরোধ শিথিল করা হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, বৃটেন, চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনার পর এ চুক্তিতে উপনীত হয় ইরান। এর মধ্য দিয়ে ইরানকে কেন্দ্র করে যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল দৃশ্যত তার সমাপ্তি ঘটলো।
এদিকে বিশ্বনেতারা চুক্তির প্রশংসা করলেও বরাবরের মতোই ত্যাড়া মন্তব্য করেছে ইসরাইল। চুক্তির পর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ইসরাইল বলেছে, তারা এমন চুক্তি সহ্য করবে না। এ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমন কথা পর্যন্ত বলেছেন যে, এই চুক্তি একটি ঐতিহাসিক ভুল। ইসরাইল যা-ই বলুক পর্যবেক্ষকরা এ ঘটনাকে ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করছেন। বিশেষ করে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি যে উদার নীতি গ্রহণ করেছেন তা সমগ্র বিশ্বে একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হবে। এর মধ্য দিয়ে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের বিগত কয়েক যুগ ধরে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে মারাত্মক অবনতি ঘটেছিল তার অবসান ঘটলো। আর তাই বলা চলে, শুরু হয়েছে ইরানের পথচলায় এক নতুন দিগন্ত।
ওদিকে চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাতে চুক্তির মূল পয়েন্টগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হলো:
১। ইরান ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বা মজুদের পরিমাণ কমাবে। তারা শতকরা ৫ ভাগের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে না। এ মাত্রার বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হলে তা দিয়ে তৈরি করা হয় পারমাণবিক অস্ত্র অথবা তা তৈরির গবেষণা করা হয়।
২। ইরানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা হলো নাতাঞ্জ ও ফরডো। প্রতিদিন তা পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ করতে আরও সুবিধা দিতে হবে।
৩। আরাক পারমাণবিক স্থাপনার আর উন্নয়ন কাজ করা যাবে না। ধারণা করা হয়, এ স্থাপনাটি পস্নুটোনিয়াম তৈরিতে ব্যবহার করা হবে।
৪। এর বিনিময়ে ইরানের বিরুদ্ধে ৬ মাস কোন নতুন পারমাণবিক সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না।
৫। স্বর্ণসহ মূল্যবান খাতে ৭০০ কোটি ডলারের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, আমরা চুক্তিতে পৌঁছেছি। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফাবিয়াস-ও এ চুক্তি স্বাক্ষরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সংবাদ মাধ্যমকে।
উল্লেখ্য, এ চুক্তির ফলে ইরান ৪২০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সুযোগ পাবে। এ চুক্তির কারণে পরমাণু কর্মসূচি হ্রাস করার ফলে ইরান স্বর্ণ, পেট্রোক্যামিকাল এবং গাড়ির ওপর থেকে সীমিত আকারের অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে বলে আশা করছে। তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের আস্থা অর্জনের পদক্ষেপ হিসেবেই এ চুক্তির পরিকল্পনা করা হয়েছে- এমনটা ভাবছেন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা।