দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীর লোক সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নগর। কিন্তু সবার এই নগর জীবনের প্রতি কোন আগ্রহ আছে? নাকি নগর জীবনের এই কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে দূরে কোথাও বসবাস করার কথা চিন্তা-ভাবনা করেন? গুহায় বসবাসের এমনই এক কাহিনী আজকে তুলে ধরা হবে।
যুগ যখন আধুনিক তখন আরাম আয়েশের কত কিছু থাকলেও অনেকেই আবার এসব আরাম আয়েশে না থেকে একটু ব্যতিক্রমি নিরিবিলি জীবন যাপন করতে চান। নগরীর নানা অব্যবস্থা এবং নানা প্রতিকূলতার কারণেও অনেকেই ত্যাক্ত। আর তাদের এই এক ঘেয়েমি এক সময় তাদের নিয়ে যেতে পারে অনেক অনেক দূরে। আজকের কাহিনীর এই চিনের ফেং সাহেব তাদের মধ্যে একজন। তিনি এমন নগর জীবনে ত্যাক্ত হয়েই সিদ্ধান্ত নেন দূরে কোথাও চলে যাবেন। বসবাস করবেন একাকি। কারো হিংসা, হানাহানি বা কোন ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার তিনি হবেন না। নিজের মতো করে একাকি জীবন-যাপন করবেন।
অনেক দিন ধরেই ফেং সাহেব এমন ধরনের মনোভাব পোষণ করছিলেন। কিন্তু কখন কিভাবে এটি বাস্তবায়ন করবেন তা ভেবে পাননি। বার বার ভাবতে ভাবতে এক সময় তার বুদ্ধি এলো, তিনি গুহায় বাস করবেন। আমাদের আদি পিতা-মাতা ও বংশ ধরেরা তো এক সময় গুহাতেই বসবাস করতেন। তাহলে তিনি কেনো পারবেন না। চিনের বংশদ্ভুত ফেং সাহেবের পুরো নাম ফেং মিংশান। তিনি সত্যিই সিদ্ধান্ত নিলেন গুহায় বসবাস করবেন।
নগর জীবনের শান্তির খোঁজে তিনি আশ্রয় নিলেন গুহায়। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের শানজি প্রদেশে এই গুহা অবস্থিত। ফেং বসবাস করতেন গোয়াবাডিয়ানে। গোয়াবাডিয়ান থেকে তার গুহার দূরত্ব গাড়িতে দুই ঘণ্টার মতো। ফেং যখন বাড়ি ছেড়ে গুহায় বসবাস শুরু করেন তখন তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। আর এখন তার বছয় ৫৪ বছর। ইতিমধ্যেই তার জীবন থেকে চলে গেছে ২০টি বছর। এই সময়টি তার কেটে গেছে গুহায়। নগরের সকল কোলাহল, হইচই, নানা চাহিদার আর্তনাদ- সব কিছু দূরে ঠেলে বাস করছেন এক নিরব-নিস্তব্ধ-নির্জন গুহায়।
ফেং সাহেব ১৯৯৩ সালে যখন গুহায় আসেন তখন এই গুহা ছিল বেশ সংকীর্ণ এক গুহা। ছিল না কোন জানালা। তিনি একটা হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে ভাঙতে বাড়াতে থাকেন গুহায় থাকার জায়গাগুলো। গুহার প্রবেশ মুখে দরজাও বসান ফেং সাহেব। জানালাও আছে তার গুহায়। মাটি থেকে ৫০ ফুট উঁচু তার এই গুহাটি। তবে এতো সহজে তিনি গুহায় উঠতে পারেন না। হাত-পায়ে কসরত করে তবেই উঠতে হয় তার বর্তমান আবাসস্থানে।
ফেং সাহেব গুহা থেকে খুব একটা বাইরে বের হন না। দরকারি কিছু কাজ সারার জন্যই বাইরে আসেন। বাস করছেন একেবারে সন্ন্যাসীর মতো করে। ইতিমধ্যেই তাকে সন্নাসী উপাধিও দেয়া হয়েছে। আর যেসব সাংবাদিক তার সাক্ষাৎকার নিতে যান- তার সাথে কথা বলেন গুহার ভিতর থেকেই।
ফেং সাহেব জানান, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমেও গুহার ভেতরটা বেশ ঠাণ্ডা থাকে। কোনো কোলাহল নেই বলে একাকীত্ব উপভোগও করতে পারেন নিজের মতো। আধুনিক মানুষের মতো কোনো সুযোগ সুবিধাও নেননি তিনি। প্রায় প্রতিদিনই জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে বেরোন গুহা থেকে। আশপাশের জঙ্গল থেকেই সেটা জোগাড় করেন তিনি। ফেংয়ের আত্মীয় পরিজনরা বহুবার তাকে আবার নাগরিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তিনি তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল। এমন কি তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগও রাখতে চান না।
বর্তমান জীবন যাপনের ব্যাপারে ফেংয়ের মতের সঙ্গে মোটেই সম্মত নয় স্থানীয় প্রশাসন। তাদের ধারণা ফেং একজন স্রেফ মানসিক রোগী। তাকে যত শিগগির সম্ভব মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো দরকার। নগর জীবনে অভ্যস্ত নাগরিকদের কাছে মানসিক রোগী ছাড়া কিছু না হলেও ফেং চলেছেন তার নিজের মতো করে। এই চলার পথ হয়তো একদিন শেষও হবে। কিন্তু তার এই কাহিনী কোন দিন ফুরোবে না। তথ্যসূত্র দৈনিক যুগান্তর অনলাইন