ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আবারও দেশের গার্মেন্টস্ সেক্টর নিয়ে শুরু হয়েছে খেলা। এ খেলায় যে বা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে সম্ভাবনাময় এই গার্মেন্টস সেক্টরে ধ্বস অনিবার্য ।
গত কয়েক ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে সহিংস বিক্ষোভ করছে। শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে তিন শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর করে। এ সময় ওই এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ আশুলিয়ার সব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। দুটি সংগঠনের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা এ ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, মালিকপক্ষ কয়েকদিন আগেই সাবধান করেছিল যদি শ্রমিকরা এভাবে ভাংচুর ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে তাহলে তারা কারখানা বন্ধ করে দেবে।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
শ্রমিকরা বলেছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। যে কোন মূল্যে তাদের দাবি-দাবা আদায় করা হবে।
আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল ১৬ জুন টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করেছে। ১৬ জুন সকাল থেকে শ্রমিকরা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল ও নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। তারা ৩০টি যানবাহন ভাংচুর করে। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের ওপর পুলিশ বেপরোয়া লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে সাংবাদিক, পুলিশ ও শ্রমিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। মহাসড়কসহ শাখা সড়কগুলোতেও যানবাহন চলাচল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
বেতন বাড়ানোর কোন সুযোগ এ মুহূর্তে নেই বলে ১৫ জুন বিজিএমইএ সিদ্ধান্ত জানালে ১৬ জুন আবার ক্ষোভে ফেটে পড়ে শ্রমিকরা। আশুলিয়ার গোটা এলাকা তাদের দখলে চলে যায়। এ পরিস্থিতিতে ওই অঞ্চলের সবক’টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এ অসন্তোষের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বাইপাইল, শিমুলতলা, জামগড়া, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুরসহ বিভিন্ন এলাকার তৈরি পোশাক কারখানায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হাতে নাজেহাল হন গণমাধ্যম কর্মীরা। শ্রমিকরা জানায়, বেতন কাঠামোর বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা চান। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জামগড়া, বেরন, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জিরাব, পুকুরপাড়, ঘোষবাগ, শিমুলতলা, ইউনিক, গাজীরচট, বগাবাড়ী, বাইপাইল, ডেন্ডাবর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে ওই সব এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা বন্ধ হয়ে যায়।
আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক মিছিল নিয়ে কারখানার দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। জিরাব পুকুরপাড় এলাকায় মাহবুব পোশাক কারখানার সামনে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়। জামগড়া চৌরাস্তা এলাকায় আরএম ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে উত্তেজিত শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গ্লাস ভাংচুর করে। এ সময় রোগীদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার মাহবুবা অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে বিশমাইল-জিরাব সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। অপরদিকে অনন্ত গ্রুপ, নিউএইজ, এনভয় গ্রুপসহ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কে অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রাবার বুলেটে স্থানীয় এক সাংবাদিক আহত হন। নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- সোহেল, শাহিন, মমতাজ, মোজাম্মেল, সবুজ ও চম্পা। নরসিংহপুর অনন্ত গার্মেন্টসের সামনে পুলিশ কনস্টেবল জাহিদ শ্রমিকদের ইটের আঘাতে আহন হন। তার কপাল ফেটে গেছে। তাকে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কাঁচপুরের শিল্পকারখানার শ্রমিকরা শনিবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন যানবাহন ও সিনহা গার্মেন্টসের ভেতরে ব্যাপক ভাংচুর করে শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং দুই শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় সাংবাদিক, পথচারী, পুলিশ ও শ্রমিকসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশংকাজনক। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন শ্রমিককে গ্রেফতার করে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাঁচপুর সিনহা গার্মেন্টসসহ কয়েকটি গার্মেন্টসের প্রায় ৮-১০ হাজার শ্রমিক কাজে যোগ না দিয়ে প্রথমে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সাভার আশুলিয়ায় আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করে। এ সময় তারা ১০-১২টি যানবাহনে ভাংচুর এবং আশপাশের কয়েকটি দোকানে লুটপাট চালায়। সোনারগাঁ থানা পুলিশ, কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ, কাঁচপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার আর্মড পুলিশ সদস্যরা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। শ্রমিকরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশ কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাঁচপুরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আমাদের দেশের গার্মেন্টস সেক্টরকে ধ্বংসের জন্য একটি মহল সব সময় ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে এই মদদ দাতাকে খুঁজে বের করতে হবে। নইলে দেশের এই সম্ভাবনাময় খাতটি এক সময় ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ দেখা যাচ্ছে, খুব সামান্য একটি কারণকে বড় করে দেখিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে ভাংচুর-বোমাবাজিসহ আইন শৃংখলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে। এটি দেশের জন্য মোটেও সুখকর নয়। এই বিশৃংখলা রোধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।