ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ আবারও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এমনিতে বিদ্যুতের অসহনীয় লোড শেডিং এর কারণে জনগণ অতিষ্ট, তারওপর বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানো হলে জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি যে বিতৃষ্ণা ও ক্ষোভ তা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
চলমান লোডশেডিংয়ের মাত্রা সহনীয় করতে যে কোন উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১৪ জুন সচিবালয়ে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের এক সমন্বয় সভায় এ নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া গ্রিডভুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিআরসিকে) অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করতে পেট্রোবাংলা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। ১৫ মে জ্বালানি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গ্যাস উন্নয়ন নীতিমালা সংক্রান্ত এক বৈঠকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের ব্যবহার সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, পিডিবি চেয়ারম্যান এসএসএম আলমগীর কবির, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর, বিপিসি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকসহ জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সারাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানানো হয়, তেলের সংকটের কারণে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে সারাদেশে তীব্র লোডশেডিং চলছে। এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য বন্ধ থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে বিপিসি চেয়ারম্যানের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেল সরবরাহ পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তারা সব বিদ্যুৎ কেন্দে তেল সরবরাহ করতে পারবেন। পিডিবির তরফ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, তারা তেল পেলেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে পারবেন। বৈঠকে দ্রুত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেয়া হয়।
বৈঠক সূত্র বলছে, তরল জ্বালানিনির্ভর কেন্দ্রগুলো চালাতে গেলে সরকারের পক্ষে বিশাল ভর্তুকি দেয়া সম্ভব নয়। যে কারণে বিদ্যুতের পাইকারি এবং খুচরা উভয় প্রকার দাম বৃদ্ধি করা হবে। আগামী পহেলা জুলাই থেকে বর্ধিত দাম বৃদ্ধি কার্যকরের ঘোষণা আসতে পারে। তবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বিদ্যুৎ খাতে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করবে বিবেচনা করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিইআরসি সূত্র আরও জানায়, পেট্রোবাংলা সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি এমসিএফ গ্যাসের দাম ৭৯.৮২ টাকা থেকে ৫.২৪ ভাগ বৃদ্ধি করে ৮৪ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিক এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া অন্য খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকা এবং রাজশাহীতে বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাস সংযোগ দেয়া সম্ভব। সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল গ্যাসের উৎপাদন দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিক্রম করলে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে। চলতি সপ্তাহে গ্যাসের উৎপাদন দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিক্রম করছে। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বৈঠকে নতুন গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তবে নতুন সংযোগ দিলে গ্যাসের বিতরণ পর্যায়ে এর কি প্রভাব পড়বে এখন তা বিবেচনা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অপর এক সভায় আগামী বছর কি পরিমাণ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের সম্ভাব্য বিদ্যুৎ সংযোগ কত হতে পারে তা মন্ত্রণালয়কে জানায়। বিদ্যুৎ বিভাগ মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে নতুন সংযোগ দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবে বলে জানা গেছে।
এখন সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেনো, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মোটেও সুখকর হবে না বলে মনে করেন দেশের সাধারণ মানুষ।