রাঙামাটি থেকে আব্দুর রাজ্জাক ॥ পাহাড় ধসে গত কয়েকদিনে সহস্রাধিক মানুষ মারা গেলেও এখনও পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে রাঙামাটির অসংখ্য মানুষ।
প্রবল বর্ষণে বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহু মানুষ পাহাড় ধসে মারা গেছে। কিন্তু এতো ঝুঁকি জেনেও রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ের খাদে বসবাস করছে অসংখ্য মানুষ। দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে এসব মানুষের। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারীরা। শুধু রাঙ্গামাটি শহরে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। গত কয়েক দিনের টানা প্রবল বর্ষণে ব্যাপক পাহাড় ধস হওয়ায় শহর এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবার উদ্বাস্তু হয়েছে। আতংকে ভুগছে অনেকে। এছাড়া প্রবল বর্ষণে শহর এলাকাসহ গোটা জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে লোকজন। বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে ভূমি ও পাহাড় ধস হচ্ছে। কাপ্তাই লেকের পানি বৃদ্ধিতে দ্রুত প্লাবিত হচ্ছে হ্রদবেষ্টীত নিম্নাঞ্চল।
খবরে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলায় কোথাও প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সতর্ক করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সরেজমিন দেখা গেছে, বর্ষণে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পাহাড় ধস হয়েছে। এতে আতংকে ভুগছে লোকজন। অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। অব্যাহত পাহাড় ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকায় জেলা প্রশাসন থেকে শহরে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে রাঙ্গামাটি শহর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটে ব্যাপক পাহাড় ধসের ঘটনা। এতে ঝুঁকিতে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু রাঙ্গামাটিতে অব্যাহত পাহাড় কাটা কখনও বন্ধ হয়নি। প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে পাহাড়ের পাদদেশে নির্মাণ করা হয় বাড়িঘর। এসব বাড়িঘর নির্মাণে মানা হচ্ছে না বিল্ডিং কোড। ফলে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়ছে মারাত্মকভাবে।
জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। সবচেয়ে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটেছে ১৯৯৭ সালের জুন মাসে। ওই সময় বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে শহরের রিজার্ভমুখ এলাকায় শিশু, মহিলাসহ একই পরিবারের ৭ জনের প্রাণহানি হয়। এরপরও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতবাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত পরিবারের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। ২৭ জুন রাঙ্গামাটি জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আক্তার ও সাব্বির আহম্মেদের নেতৃত্বে দমকল বাহিনীর সদস্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া পাহাড়ে ভূমি ধসের কারণে যাতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করা হয়। ওই সময় তারা রাঙ্গামাটি টেলিভিশন ভবন এলাকা, শিমুলতলী ও মানিকছড়িসহ শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনের তালিকা প্রস্তুত করে ২৮ জুন তা জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভমুখ, কেরানিপাহাড়, ওয়াপদা কলোনি, ওমদা মিয়া হিল, আসামবস্তি, ট্রাইবেল আদাম, টিটিসি, হাসপাতাল, ভেদভেদী, রাঙ্গাপানি, মোনঘর, কলেজ গেট, কল্যাণপুর, নতুনপাড়া, পুলিশ লাইন এলাকাসহ রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ির আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ চলে আসছে অপরিকল্পিতভাবে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদবেষ্টীত পাহাড়ের পাদদেশে এবং ভাসমান টিলায় মাটি কেটে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ করে পাহাড় ধসের ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে অনেকে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধসে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এসব এলাকা থেকে বসবাসকারীদের না সরালে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকার জনগণ মনে করছে।