ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তায় জানেন। তিনি যাকে খুশি যেমন খুশি তেমন সন্তান দিয়ে থাকেন। কারো ৫টিই মেয়ে সন্তান দিচ্ছেন আবার কারো ৫টি হচ্ছে ছেলে সন্তান। এর জন্য স্বামী বা স্ত্রী বিশেষ করে স্ত্রী কোন ভাবেই দায়ী নয়। তারপরও আমাদের দেশে মাঝে মধ্যেই এমন সব লোমহর্ষক কাহিনী শোনা যায়। যেমনটি আজকের কাহিনী।
এমনই এক লোমহর্ষক কাহিনীর সূত্রপাত ঘটেছে নরসিংদীতে। একের পর এক কন্যাসন্তান জন্ম দেয়াই কাল হল নরসিংদীর নারায়ণপুর ইউনিয়নের জংগয়া গ্রামের ৪ সন্তানের জননী জোনাকি বেগমের। আবার অনাগত সন্তান কন্যা হবে এমন খবর শুনতে পেয়ে পাষণ্ড স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাতাড়ি হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে ছেঁচে নির্মমভাবে জোনাকি বেগমকে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে।
আবার এ হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে বলেও নিহতের পরিবার অভিযোগ করছে। থানা পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের ম্যানেজ করেই নাকি এমন লোমহর্ষক খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের পরপর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে স্বামী আবদুর রহমান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই রফিকুল বেলাব থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। ঘটনাটি ঘটেছে ২৭ জুন নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার সররাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১০ বছর আগে বেলাবোর সররাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে আঃ রহমানের সঙ্গে একই উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জঙ্গয়া গ্রামের সাদু মিয়ার মেয়ে জোনাকির বিয়ে হয়। সংসার জীবনে জোনাকির কোলজুড়ে জন্ম নেয় ৪টি কন্যা সন্তান। পুত্র সন্তানের আশায় উদগ্রীব হয়ে ওঠে নিহত জোনাকির স্বামী। এরই মধ্যে জোনাকি আবার অন্তঃসত্ত্বা হয়। শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করতে ২৭ জুন জোনাকির আল্ট্রাসোনোগ্রাম করানো হয়। এ সময় জোনাকির স্বামী জানতে পারে তার আরও একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেবে। এরপর থেকেই জোনাকির ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পাষণ্ড স্বামী জোনাকিকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও ইট দিয়ে ছেঁচে হত্যা করে। হত্যার পর এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য লাশের গলায় ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে নির্মাণাধীন দেয়ালের রডের ম্যধ্যে ঝুলিয়ে রাখে। এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরপর বাড়িঘরে তালাবদ্ধ করে মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেছে নিহতের স্বামী আবদুর রহমান।
ইব্রাহিমপুর গ্রাামে গিয়ে দেখা যায়, পাষণ্ড স্বামী বাড়িঘরের মালামাল নিয়ে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে। জোনাকির ৪ কন্যা সন্তান রাধিকা (৭), আকিদা (৬) এবং যমজ আহরিনা ও জেদিয়া (৩) কাঁদছে।
এই যদি বর্তমান সমাজের চিত্র হয়, তাহলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? গ্রামের সাধারণ মানুষ এমনিতেই একটু ভীতু প্রকৃতির। তারপর কোন ঘটনা ঘটলে সেটিকে অর্থের বিনিময়ে অন্যদিকে প্রবাহিত করার ঘটনাও আমাদের দেশে কম নয়। আশা করা যায়, মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অপরাধীকে আইনে সোপর্দ করতে এগিয়ে আসবেন।