ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নয়া কৌশল নিয়েছে পাকিস্তানের বর্তমান সরকার। আদালতের হাত থেকে বাঁচার জন্যই নয়া এ কৌশল। কিন্তু আসলেও কি তাদের শেষ রক্ষা হবে?
সামপ্রতিক সময়ে পাকিস্তানে বিদ্যমান আদালত অবমাননা আইন সরগরম করে রেখেছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গন। এ আইনের সুপ্রিম ক্ষমতাবলে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকা শীর্ষ নেতারা। সরকারে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের মধ্যে বিরাজমান মতদ্বৈধতার কারণে এ আইনটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উল্লেখ্য, জন্মলগ্ন থেকেই দেশটি নানারকম রাজনৈতিক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এলেও ইউসুফ রাজা গিলানির আগে কাওকে আর আদালত অবমাননার দায়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়নি। তাছাড়া এ আইনটি দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ওপর যেভাবে চড়াও হয়েছে তাতে পাকিস্তানের ইতিহাসে রীতিমতো বিরল। এসব কারণে নিজেদের রক্ষায় আইনটি সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ সরকারের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। অবশেষে সেই কাজটি করে ফেলল পাক সরকার। ৯ জুলাই পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে আদালত অবমাননা আইনের সংশোধিত বিলটি পাস হয়েছে। সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ আদালত যেন আর কোনরকম হস্তক্ষেপ করতে না পারে তার জন্য এ নতুন আইনটি তড়িঘড়ি করে পাস করিয়ে নেয়া হয়। সংশোধন আকারে পাসকৃত এ বিলটিতে ১৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অনুচ্ছেদ হল, সরকারের নির্বাহী ব্যক্তিদের ওপর আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এর ফলে ইচ্ছা করলেই সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি আদালত অবমাননা আইনের অভিযোগ আনতে পারবে না।
বিলটি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পাস হওয়ার পর দেশটির বিরোধী দল ও সর্বস্তরের জনগণ সরকারের এমন উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেছে। ৯ জুলাই আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ফারুক এইচ নায়েক বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর এর ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। উত্থাপিত বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্যরা বিলটির তীব্র বিরোধিতা করেন। বিরোধীরা এ বিলটিকে ‘কালো আইন’ হিসেবে অভিহিত এবং বিলটি প্রত্যাখ্যান করেন তারা। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা ও বিরোধিতা বিলটি পাসে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। কারণ পার্লামেন্টের ৩৪২ আসনের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে পিপিপির। যার ফলে কণ্ঠভোটে বিলটি অনায়াসেই পাস হয়ে যায়।
এদিকে বিলটিকে আইনে পরিণত করার জন্য পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের অনুমোদন আবশ্যক। এ অনুমোদনের পর তা আবার প্রেসিডেন্টের সম্মতিজ্ঞাপক স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে। প্রেসিডেন্টকে বাঁচাতে যে আইন সে আইনে স্বাক্ষরের জন্য তিনি কালবিলম্ব করবেন না এটা সকলের জানা। কিন্তু সিনেটে বিলটির অনুমোদন পেতে একটু বেগ পেতে হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। এক্ষেত্রেও সরকার পক্ষের সমর্থকরাই বেশি থাকায় আশা করা হচ্ছে দু-একদিনের মধ্যেই তা উচ্চকক্ষের অনুমোদন পাবে। এ প্রক্রিয়াটি ঠিকমতো চললে দেশটিতে কার্যকর আদালত অবমাননা অধ্যাদেশ ২০০৩ বিলুপ্ত হবে। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা আইনবলে সুপ্রিমকোর্ট ইউসুফ রাজা গিলানিকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন।