ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রক্ত মানুষের শরীরে না থাকলে মানুষ বাঁচে না। মানুষের যখন রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয় তখন একজন সুস্থ্য মানুষের রক্ত নেওয়া যায়। কিন্তু ইদানিং দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ব্লাড ব্যাংক। যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। এসব ব্লাড ব্যাংকে অবৈধ রক্ত সঞ্চালন ঘটে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব অবৈধ রক্ত সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে নামছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি সঙ্গে থাকবেন। অভিযানের মূল লক্ষ্য পেশাদার রক্তদাতাদের শনাক্ত এবং অবৈধ রক্ত সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। ঢাকার বাইরের একটি সংঘবদ্ধ চক্র বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীতে মাদকের চালানের মতো রক্তের চালান পাঠিয়ে থাকে। এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে নামছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। খবর একটি দৈনিকের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু সাজাপ্রাপ্ত আসামি জেল থেকে বেরিয়ে আবারও অবৈধ ব্লাড ব্যাংকের রমরমা ব্যবসায় নেমেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিযানে জরিমানার চেয়ে তাৎক্ষণিক সাজাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কারণ জরিমানার পর আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে চক্রের সদস্যরা। তাই অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী জরিমানার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক সাজা দেয়া হবে। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা জানান, র্যাবের অভিযানের পর ব্লাড ব্যাংকের ব্যবসায় একটা পরিবর্তন আসে। কিন্তু ইদানীং একশ্রেণীর দালাল বিচিত্র কৌশলে রক্ত সংগ্রহ করছে।
চানখারপুলে অবৈধ বাণিজ্য
রাসেল আহমেদ শিক্ষিত পরিবারের ছেলে। নেশার কালো থাবায় তার সুন্দর জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। তার সঙ্গীরাও কয়েকবার বিভিন্ন নিরাময় কেন্দ্র থেকে ফিরে ফের আগের চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। রাসেল এবং তার সঙ্গীরা প্রতিদিন এক সাথে নেশা করে। একই সুঁই ফোটে সবার শরীরে। এখন তারা কেওই আর বাড়ি থেকে নেশার টাকা সংগ্রহ করতে পারে না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু রাসেল প্রতিদিন নানা কৌশলে কিছু নতুন লোককে ভুলিয়ে নিয়ে এসে রক্ত সংগ্রহ করে। সেখান থেকে টাকা আয় করে থাকে। বেশ কিছু দিন আগে মিটফোর্ড হাসপাতালের নজরুল নামের এক রক্তের দালালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার হাত ধরে এ পথে নামে সে। চানখারপুলের একটি বাসায় নজরুলের ব্লাড ব্যাংক আছে। ডোনার লাইফ নামের একটি ব্যাংকের দালালরা এই অবৈধ ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা করছে।
জামিনের পর ফের রক্ত ব্যবসা
অষ্টম শ্রেণী পাস নজরুল অত্যন্ত ধূর্ত। গত ৫-৬ বছর ধরে হেরোইনের নেশায় আসক্ত আর সুযোগ বুঝে রক্তের দালালি করে। প্রতিদিন তার কাছে এলাকার হেরোইনসেবীরা আসে। তাদের চা খাওয়ায় সুযোগ মতো যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক হোসেন রোডের সামনের দোতালা বাড়িতে দু’একজন করে নিয়ে যায়। দশ মিনিটের মধ্যে আবার তাদের নিয়ে ফিরে আসে। নজরুলের এক বন্ধু মাদকাসক্ত কাজল কয়েকবার এখানে এসেছিল। পরে টাকার জন্য সে নিজেও অন্যদের আনে এখানে। কাজল ও নজরুল র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়ে। কিন্তু পরে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। তারা সিটি ল্যাব ও ঢাকা ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজিতে রক্ত সরবরাহ করত।
চাঞ্চল্যকর তথ্য
চানখারপুল-মহাখালী এলাকার রক্ত সরবরাহকারী মারুফ, শাহীন এবং জসীম এখন ফেরি করে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে রক্ত সরবরাহ করে। মিটফোর্ড, ঢাকা মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ঘিরে তাদের রয়েছে জমজমাট ব্যবসা। হাসপাতালের একশ্রেণীর কর্মচারীর সঙ্গে তাদের সখ্য আছে।
সংশ্লিষ্টরা যা বললেন
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হসপিটাল ও ক্লিনিক) ডাক্তার মোমতাজ উদ্দীন ভুঁইয়া জানান, অধিদফতরে লোকবলের অভাব। জেলায় জেলায় লোক থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে অধিদফতরের তেমন জনবল নেই। তিনি বলেন, রাজধানীর অলিতে গলিতে গড়ে ওঠা অবৈধ ব্লাড ব্যাংকগুলো উচ্ছেদে ফের অভিযান চালানো হবে। অভিযানের কোন বিকল্প নেই। একই সঙ্গে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৪৫টি ব্লাড ব্যাংকের অবস্থা মনিটরিং করা হবে। ইতোমধ্যে এ কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাভিশনের স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফারহাদ উদ্দীন জানান, দেশে বছরে রক্তের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ ব্যাগ। ৭০ ভাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয় পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। কিন্তু পেশাদার রক্তদাতাদের মধ্যে বেশির ভাগই মাদকসেবী, যৌনকর্মী। তিনি বলেন, রক্ত নেয়ার সময় হেপাটাইটিস বি ও সি, সিফিলিস, এইচআইভি, ম্যালেরিয়ার জীবাণু পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অবৈধ ব্লাড ব্যাংকগুলো কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করছে। কেবলমাত্র রক্তের গ্রুপ ও ক্রসম্যাচিং পরীক্ষা করেই রোগীর শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছে। এ কারণে সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ দিনকে দিন বাড়ছেই। রক্তে ভেজাল হওয়ায় আরোগ্যের পরিবর্তে রোগী মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ থেকে নিষকৃতি পেতে হলে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশের সকল নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।