ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ হূমায়ুন আহমেদ স্মরণে নাগরিক শোকসভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অনেক নামি-দামি ব্যক্তিত্ব। সেখানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বিশিষ্ট অভিনেতা সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যেনো কান্না বাঁধ মানছিল না আসাদুজ্জামান নূরের। বন্ধু হুমায়ূনকে কিছু বলতে গিয়ে মুখে কথা আসছিল না তার। বক্তৃতা দিতে এসে মাইকের সামনে না দাঁড়িয়ে দর্শকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেন। এরপর মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে চুপ করে থেকে কথা বলতে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড শোকে গুমরে গুমরে উঠছিল কান্না। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি- উপস্থিত সকলেই দেখলেন সে দৃশ্য। কান্না জড়ানো গলায় বললেন, ‘আমি হূমায়ুনকে নিয়ে শোক করতে চাই না। তার সঙ্গে অনেক আনন্দ করেছি। আমার জীবনে যা আনন্দের ঘটনা, আমার জীবনের যা অর্জন তার অধিকাংশই হূমায়ুনের অবদান। সেই আনন্দের সময়টা থাকুক। আর সব দুঃখ মুছে যাক। তার সঙ্গে আড্ডাই দিয়েছি। কাজের আড্ডা, নাটকের আড্ডা, অকাজের আড্ডা। তাকে নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব না। হূমায়ুনকে অনুভব করা সম্ভব।’ আসাদুজ্জামান নূরের কান্না জড়ানো কথা শুনে মিলনায়তনে উপস্থিত দর্শকের চোখ ভিজে উঠেছিল। গতকাল ২৮ জুলাই হূমায়ুন আহমেদের স্মরণসভায় চোখের জলে, প্রাণের আবেগে সবাই স্মরণ করলো তাকে।
উল্লেখ্য, আসাদুজ্জামান নূর এক সময় হূমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালে ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক ক্ষ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
বাংলাদেশের সাহিত্যের নন্দিত কথাসাহিত্যিক হূমায়ুন আহমেদ আজ নেই। তার মৃত্যুতে শোকে বিহবল পুরো জাতি। সেই অসামান্য লেখকের স্মরণে শনিবার ২৮ জুলাই বিকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নাগরিক শোকসভার আয়োজন করেছিল । জোটের সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ইমিরেটাস আনিসুজ্জামান, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর এমপি, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, অন্যপ্রকাশের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম এবং হূমায়ুন আহমেদের ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
আনিসুজ্জামান
আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে হূমায়ুন আহমেদ কোন অবস্থানে ছিলেন তার প্রমাণ পেয়েছি শহীদ মিনারে মানুষের ঢল দেখে। তারা হূমায়ুনকে চিনতেন না কিন্তু একজন লেখকের প্রাণের স্পর্শ তারা অনুভব করেছিল। হূমায়ুন তার সৃষ্টিশীলতার বিস্ময়কর প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তার সৃষ্ট চরিত্র মানুষের কাছে বাস্তব হয়ে ধরা দিত। তার লেখার ভাষা ও গানের ভিন্ন কিন্তু স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। এ দুটি ভাষার মাঝে ছিল যোজন যোজন ব্যবধান। কল্পনা, বিজ্ঞানচেতনা, মরমীবোধ, রহস্যময়তা, সাহিত্যে এসব কিছু সৃষ্টি করবার সাহস তিনি দেখিয়েছেন। আমরা হূমায়ুনের জন্য শোক করবো, গৌরব করবো। তিনি আমাদের মাঝে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।
সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, হূমায়ুন ছিলেন বিবেকের কণ্ঠস্বর, গল্পের জাদুকর, স্বপ্নের কারিগর। সত্য, শুদ্ধতা, সুন্দর- এই তিন স্রোত ত্রিবেণী সঙ্গমের মত তার রচিত প্রতিটি অক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে একক হাতে তিনি দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি মাটির ধুলো থেকে নিরালোকে চলে গেছেন। এই শোক আমাদের পক্ষে সহন ও বহন করা কষ্টসাধ্য।
রামেন্দু মজুমদার
রামেন্দু মজুমদার বলেন, হূমায়ুনের তুলনা তিনি নিজেই। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন। যেখানে তিনি কাজ করেছেন সেখানেই সফলতা পেয়েছেন, পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। তিনি সাফল্যের পেছনে হাঁটেননি। সাফল্য তার কাছে এসে লুটোপুটি খেয়েছে। তিনি বলেন, ক্যান্সার হাসপাতাল করার তার যে ইচ্ছা ছিল তা পূরণ করার জন্য আমরা জাফর ইকবালকে সামনে রেখে নাগরিক উদ্যোগ নিলে সফল হবো।
মোরশেদুল ইসলাম
মোরশেদুল ইসলাম বলেন, হূমায়ুন মানুষের হৃদয়ে যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তা তার মৃত্যুর পর নতুন করে উদ্ভাসিত হয়েছে। মানুষের মনে তিনি সূক্ষ্মভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঞ্চারিত করে গেছেন। যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দূর করবার চক্রান্ত চলছিল তখন চলচ্চিত্র, নাটকের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে সেই চেতনাকে জাগরিত করেছেন তিনি।
মাজহারুল ইসলাম
অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম কথা বলতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, দশদিন আগে যে মানুষটি বেলভিউ হাসপাতালে শুয়ে ছিলেন আজ তিনি নেই। জাফর ইকবাল ভাই স্যারের কাছে গিয়ে বললেন, দাদা ভাই আমরা এসেছি। ডাক্তার বলছিলেন, আপনারা কথা বলেন, উনি সব শুনতে পাচ্ছেন। সেই মানুষটি চলে গেলেন।