ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে কমমূল্যে খাদ্যশস্য কিনতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি নানা শ্লোগান শোনা গেলেও ওয়ার্ল্ড ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স অর্থাৎ বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম!
জানা গেছে, খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও একেবারে নিম্নতম পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং মান ও নিরাপত্তা- এ তিনটি সূচকের ভিত্তিতে এ তালিকাটি তৈরি করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইনটেলিজেন্স ইউনিট। বিশ্বের ১০৫টি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গবেষণা ইউনিটটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
খাদ্যনিরাপত্তা সূচকে ১০০-এর মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট। এ পয়েন্ট নিয়ে ১০৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে শ্রীলংকা। ৪৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় তাদের অবস্থান ৬২তম। এছাড়া ভারত ৬৬তম (স্কোর ৪০.৫), পাকিস্তান ৭৫তম (স্কোর ৩৮.৫), মিয়ানমার ৭৮তম (স্কোর ৩৭.২) ও নেপাল ৭৯তম (স্কোর ৩৫.২) অবস্থানে রয়েছে এ তালিকায়। তথ্য দৈনিক যুগান্তরের।
ইকোনমিস্টের ইনটেলিজেন্স ইউনিট তালিকা তৈরিতে তিনটি সূচকে ২৫টি বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। এর মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সূচক বিশ্লেষণে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হল- পরিবারের মোট ব্যয়ের কী অংশ খাদ্য সংগ্রহে ব্যয় হয়, দারিদ্র সীমার নিচে মানুষের হার, মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন কেমন, কৃষিপণ্য আমদানিতে ব্যয়, খাদ্যনিরাপত্তা তৈরিতে কর্মকাণ্ড এবং এ খাতে অর্থ যোগান দিতে কৃষকের সামর্থ্য কেমন ইত্যাদি। খাদ্যের সহজলভ্যতা সূচক বিশ্লেষণে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হল- সরবরাহের পর্যাপ্ততা, কৃষির উন্নয়নে সরকারি ব্যয়, কৃষি অবকাঠামো, খাদ্য উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি। খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা সূচক বিশ্লেষণে লক্ষ্যণীয় বিষয়গুলোর অন্যতম হল- খাবারে বৈচিত্র্য, পুষ্টিমান, প্রোটিনের পরিমাণ ও খাদ্যনিরাপত্তা ইত্যাদি। আর স্কোর নির্ণয়ে শূন্যকে সবচেয়ে কম এবং ১০০কে সর্বোচ্চ ধরা হয়েছে।
এসব বিশ্লেষণে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তিনটি শক্তির জায়গা উঠে এসেছে ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে। এগুলো হল পুষ্টিমান (স্কোর ১০০), কৃষি উৎপাদনের নিশ্চয়তা (৯৪) ও কৃষকদের ঋণপ্রাপ্তির সুবিধা (৭৫), পাঁচটি বিষয়কে চলনসই দেখানো হয়েছে- কৃষিপণ্য আমদানি ব্যয় (স্কোর ৭৪.৮), খাদ্যনিরাপত্তা (৭৪), খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মপ্রচেষ্টা (৫০), কৃষি অবকাঠামো (৪১.৭) এবং খাদ্য সংগ্রহে পরিবারের মোট ব্যয়ের অংশ (২৬), তবে আটটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট। খাবারে বৈচিত্র্যের অভাব (স্কোর ০০), কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দ স্বল্পতা (০০), মাথাপিছু গড় বার্ষিক উৎপাদন কম হওয়া (২.১), আমিষ জাতীয় খাদ্যের স্বল্পতা (১২.৩), দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীর অধিক হার (১৮.২), রাজনৈতিক অস্থিরতা (২২.২) এবং সরবরাহের অপ্রতুলতা (২২.৪)-এর অন্যতম। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সার্বিক বিচারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার স্কোর ৩৩, সহজলভ্যতার স্কোর ৩৭.৬ ও খাদ্যমান ও নিরাপত্তার স্কোর ৩০.৪, এতে আরও দেখানো হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১২ অর্থাৎ ১২ বছরে খাদ্যদ্রব্যে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ প্রায় ১৮০ শতাংশ।
খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ধনী দেশগুলো এগিয়ে। তালিকার প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (স্কোর ৮৯.৫), ডেনমার্ক (৮৮.১) ও ফ্রান্স (৮৬.৮), তালিকায় একেবারে তলানিতে ঠাঁই হয়েছে আফ্রিকার সাহারা সংলগ্ন এলাকার দেশগুলোর। শেষ তিনটি অবস্থানে রয়েছে বুরুন্ডি (স্কোর ২২.৯), শাদ (২০.২) ও ডিআর কঙ্গো (১৮.৪)।
রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে যা পাওয়া যায় তা হলো, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তায় একেবারে পিছিয়ে আছে। ক্ষমতাসীনরা সবসময় বড় বড় কথা বললেও বাস্তব চিত্র কি তা এই রিপোর্টে ফুটে উঠেছে। তাই সাধারণ মানুষ মনে করে সরকারের উচিত বিষয়গুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। তা নাহলে বাংলাদেশ আজীবন ওই তলানীতেই পড়ে থাকবে।