দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আধুনিক বিজ্ঞানের এই যুগেও আপনি গুটিকয় মহিলা বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করতে পারবেন। তাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন বিজ্ঞানে যাদের অবদান অনস্বীকার্য। নিবেদিত সেই সকল বিজ্ঞান প্রাণ মহিলার মধ্যে ছয়জনের তথ্য এখানে তুলে ধরা হল।
১. অ্যাডা লাভলেস কিং বায়রন
তার অন্য পরিচয় তিনি ছিলেন বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রনের কন্যা। জন্মের একমাসের মাথায় তার বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। লর্ড বায়রন ছিলেন ভবঘুরে প্রকৃতির। অ্যাডা ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন ভবঘুরে প্রকৃতি পরিত্যাগ করতে। তাই তিনি বেছে নিয়েছিলেন কঠিন যুক্তিবিদ্যা আর মৌলিক গণিত। এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিনের জনক চার্লস ব্যাবেজ ছিলেন তার শিক্ষক। ১৮৪২ সালের দিকে ব্যাবেজ ডিফারেন্সিয়াল ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করলে অ্যাডা এর জন্য প্রোগ্রামিং লিখা শুরু করেন। আর একেই বিবেচনা করা হয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর প্রথম অ্যালগোরিদম। ফলে তিনিই বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার।
২. অ্যামি নোথার
অ্যামি নোথারকে বলা হয় গণিতের অ্যাথেনা। আধুনিক গণিত কল্পনাই করা যেত না অ্যামি নোথারকে ছাড়া। নোথারের বিষয় ছিল অ্যাবস্ট্রেক অ্যালজেব্রা। তার গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে একটি হলো নোথারিয়াম উপপাদ্য। পদার্থবিদ্যার ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র এবং শক্তির সংরক্ষণ সূত্রে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়াও মহাকাশ বিজ্ঞানে বিশেষত কৃষ্ণগহ্বর গবেষণায় তার সূত্রগুলো জোরালো ভূমিকা পালন করে। আধুনিক গণিতের উর্বর বিপ্লবে অবদানস্বরূপ তাকে বলা হয় আধুনিক গণিতের জননী। চাঁদের একটি অংশের নামকরণ করা হয়েছে তার নামে, এছাড়াও রয়েছে সৌরজগতের অনেকগুলো গ্রহাণু।
৩. ম্যারি অ্যানিং
১৭৯৯ সালে একটি শ্রমিক পরিবারে ম্যারি অ্যানিং জন্মগ্রহণ করেন। তার মৃতবোনের নামানুসারে তার নামকরণ করা হয়। তার বাবা ছিলেন কাঠমিস্ত্রি এবং তিনি ভ্রমনার্থীদের কাছে বিক্রি করার জন্য জীবাশ্ম খুঁজে বের করতেন। বাবার সাথে বের হতে হতে অ্যানিং একসময় ভূতত্ত্বের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। ফলে পরবর্তীতে তিনি ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯ শতকের শুরুর দিকে তিনি ফসিল গবেষণায় বৈপ্লবিক আবিস্কার করেন। ডাইনোসরের রহস্য তার হাত ধরেই উন্মোচিত হয়। অ্যানিং ধীরে ধীরে খ্যাতি অর্জন করেন এবং জীবাশ্ম উন্মোচনে অগ্রগতি অর্জন করেন। তার নামের সুখ্যাতির ফলশ্রুতিতে প্রচলিত হয়, “She Sell Sea Shell”। ভাইয়ের সাথে কাজে বের হয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি মাছের ফসিল খুঁজে পান। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজকের বিজ্ঞানে জীবাশ্মবিদ্যা আলাদা একটি স্থান দখল করে আছে।
আরো জীবনী পড়ুনঃ আধুনিক রসায়নের প্রতিষ্ঠাতা জন ডাল্টন!
৪. লিস মিটনার
আইনস্টাইন তাকে বলতেন জার্মানির মেরি কুরি। মিটনারের জীবনীটি কিছুটা হৃদয়বিদারক। মিটনারের জন্ম হয়েছিল এমন পরিবারে যেখানে স্পস্টভাবে উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। ১৯০৫ সালে মিটনার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি পরবর্তীতে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের জনক ম্যাক্স প্লাংকের সাথে কাজ করেন। এরপর তিনি কাজ শুরু করেন রসায়নবিদ অটো হ্যানের সাথে এবং এখানেই তিনি উদ্ভাবন করেন যুগান্তকারী নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া। ১৯৩০ সালে নাৎসিরা জার্মান দখল করলে তাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ১৯৪৪ সালের নোবেল পুরুস্কারের জন্য মনোনীত হন বিজ্ঞানী অটো হ্যান। তিনি তার গবেষণা পত্রে একবারও মিটনারের নাম উল্লেখ করেননি। কারন তিনি চাননি মিটনার তার নোবেলের ভাগীদার হোক। এরফলে নোবেল থেকে বঞ্চিত হয় মিটনার।
৫. বারবারা ম্যাকক্লিন্টক
বারবারা ম্যাকক্লিন্টক কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। তার পড়াশোনার বিষয় ছিল জেনেটিক্স। পরবর্তিতে তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক প্রোগ্রামের অন্যতম কর্ণধার হন। তিনি ভুট্টার বংশগতি নিয়ে গবেষণার সময় ক্রোমোসোম আবিস্কার করেন। বংশগতির জন্য কোন জোড়াটি দায়ী তা নির্ধারণ করেন। ক্রোমোসোম বিষয়ে তার এই গবেষণা পরবর্তীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে। মানুষের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে ডিএনএ তথা ক্রোমোসমের মাধ্যমে। এরফলে সৃষ্টি হয় বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৩ সালে তাকে নোবেল পুরষ্কাররে ভূষিত করা হয়।
৬. ডরোথি হজকিন
ডরোথি মিশরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা ছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি ইংল্যান্ড চলে আসেন এবং পড়াশোনা শুরু করেন। তার পড়াশোনার বিষয় ছিল রসায়ন। এক্সরে ক্রিস্টালগ্রাফি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার সময় তিনি স্টেরয়েড আবিস্কার করেন। পরবর্তিতে এই আবিস্কারের অবদানস্বরূপ অর্জন করেন নোবেল পুরুস্কার। তার গবেষণার হাত ধরে সৃষ্টি হয় অনুপ্রাণবিজ্ঞান নামক বিষয়।
বিজ্ঞানে আজকের এই উন্নতির শিখরে আরোহণের পেছনে আরো অনেক অজানা মহিলা বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে। আমরা এখানে তার সামান্য কিছু তুলে ধরলাম।
তথ্যসূত্রঃ অলদ্যাটইন্টারেস্টিং
This post was last modified on সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪ 9:48 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শসা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্যতম পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি সবজি।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অ্যাপল ও গুগল বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবহারকারীদের আবারও নতুন করে সাইবার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সবচেয়ে পরিচিত ও সহজলভ্য একটি সবজি হলো…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউডের দুই অভিনেত্রী কাজল-টুইঙ্কেলের ‘টু মাচ উইথ কাজল অ্যান্ড টুইঙ্কেল’…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গত কয়েক দিন ধরে, নিউ সাউথ ওয়েলস (অস্ট্রেলিয়া) এবং দ্বীপ…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীনা বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তারা এমন একটি কৃত্রিম চিপ উদ্ভাবন…