নীতিমালা হয়েছে, আদালতের নির্দেশও রয়েছে তথাপিও সুচিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে

ঢাকা টাইমস্‌ রিপোর্ট ॥ নীতিমালা হয়েছে, আদালতের নির্দেশও রয়েছে কিন্তু তারপরও জনগণ হচ্ছে নিষ্পেষিত- সুচিকিৎসা নিশ্চিত হচ্ছে না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।

প্রকাশ থাকে যে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও গত এক বছরে দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেসিক লাইফ সাপোর্টসহ (বিএলএস) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা হাসপাতালে আগত রোগীদের ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক বছরেরও কিছু আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাসেবা নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আমির হোসেনের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নীতিমালার সুপারিশ অনুসারে দেশের ৪৮২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ন্যূনতম সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বেসিক লাইফ সাপোর্ট অর্থাৎ ভেন্টিলেটরসহ একশয্যার আইসিইউ চালু, ন্যূনতম একটি করে ইসিজি, ডিফেব্রিলেটর, ৫০০ এএম এক্সরে, কালার ডপলার আলট্রাসনোগ্রাম, ব্লাড গ্যাস ও বায়ো কেমিক্যাল এনালাইজার মেশিন রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা ছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি জেলা হাসপাতালের জন্য এডভান্স লাইফ সাপোর্টসহ (এএলএস) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবলের তালিকা প্রণয়ন করে ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল। নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে আদালতে জমা দেয়া হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে সেই নীতিমালার আলোকে যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার কাজ এখনও শুরু হয়নি। যে কারণে জনগণকে এখনও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. খন্দকার মোঃ শিফায়েত উল্ল্যাহ বলেছেন, বর্তমান অর্থবছর (জুলাই) থেকে পর্যায়ক্রমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় জরুরি যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই সিএমএসডির মাধ্যমে নির্দিষ্টসংখ্যক যন্ত্রপাতির প্যাকেজ তৈরি করে তা কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশকৃত নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সবরাহের মাধ্যমে এখনকার চেয়ে ভবিষ্যতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে শরীয়তপুরের কিশোরী হেনা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চিকিৎসকদের কর্তব্যে অবহেলা ও ময়নাতদন্তে গাফিলতি হয়েছে এমন প্রতিবেদন দেখে উচ্চ আদালতের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্বপ্রণোদিত হয়ে হেনার লাশ পুনঃময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্তে চিকিৎসকদের কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। শরীয়তপুরের চিকিৎসকদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও রাজধানী ঢাকার চিকিৎসকদের ময়নাতদন্তে ভিন্নতা পাওয়া যায়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় দুই বিচারপতি উপজেলা হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসাসেবা প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তালিকা প্রণয়ন ও কর্মরত চিকিৎসকদের তালিকা প্রণয়ন ও সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসাসেবা চালাতে প্রয়োজনীয় জনবলের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশে অতিরিক্ত সচিব আমির হোসেনকে সভাপতি করে ৯ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট চিফ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হূদরোগ ইন্সটিটিউট ও জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউটের পরিচালকত্রয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর হাসপাতাল, লাইন ডিরেক্টর অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিস ডেলিভারি (ইএসডি), পরিচালক সিএমএসডি ও অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি। বিশেষজ্ঞ কমিটির অধীনে চার সদস্যের অপর একটি সাবকমিটিও গঠিত হয়।

জানা গেছে, প্রতি বছর উপজেলা হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা সুপরিকল্পিতভাবে হয় না। যে কারণে সেগুলো মূলত জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় খুব একটা কাজেও আসেনা। অভিজ্ঞ মহল জরুরি ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।