ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তার জীবনের সৌর্য-বীর্যের সেই গতি আর থাকেনা। নীরব-নিথর হয়ে সমাজের কাছে তখন সে শুধুই একজন বোঝা হয়ে ওঠে! কি বিচিত্র জগতের এই সব নিয়ম কানুন!
দেশীয় চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক কায়েস। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেশিরভাগ ছবিতেই তাকে দেখা গেছে কখনও বড় ভাই, কখনও পিতা আবার কখনও চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে। অনেকেই জানেন না ৭২ বছর বয়সী গুণী এই চলচ্চিত্র শিল্পী গত প্রায় সাত-আট বছর আগে গ্লুকোমাজনিত সমস্যার কারণে তার ডান চোখটি হারিয়েছেন। এই চোখটি তার অন্ধ হয়ে গেছে। অচিরেই চিকিৎসা না করতে পারলে তার বাম চোখটিও চিরতরে অন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাভাবে কায়েস তার চোখের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। আবার নিজের এই অর্থাভাবের জন্য একজন শিল্পী হয়ে কারও মুখাপেক্ষী হবেন সেটাও তিনি পারছেন না। তাই কায়েস এখন কিংকর্তব্য বিমূঢ়। কি করবেন, কোথায় গেলে নিজের এই সমস্যার সমাধান হবে এমনই ভাবনায় কেটে যাচ্ছে তার প্রতিটি মুহূর্ত।
চলচ্চিত্রের একজন নিবেদিত শিল্পীকে চাইলেই গোটা শিল্পী সমাজ চির অন্ধত্ব থেকে বাঁচাতে পারে। শুধু প্রয়োজন শিল্পীদের উদ্যোগ। কায়েস যে দিন দিন শুধু অন্ধ হওয়ার পথে পা বাড়াচ্ছেন তাই নয়, হৃদরোগ এবং ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারণে তিনি ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার মধুবাগের একটি বাসার ছোট্ট এক কামরায় প্রায় তিন বছর ধরে বিছানায় শুয়েই কাটছে তার সময়। সার্বক্ষণিকভাবে পাশে আছেন তার স্ত্রী সাবেরা আক্তার ছবি ও কন্যা শিখা। আছেন তিন ছেলে। কিন্তু তাদের যা আয় তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি বাবার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
শামসুদ্দীন কায়েসের জন্ম কুষ্টিয়ায়। এহতেশামের ‘বন্দিনী’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পড়ার সময় তিনি মেঘদূত কথাচিত্র প্রযোজিত আসাদ পরিচালিত ‘ঘূর্ণিঝড়’ ছবিতে নায়ক হিসেবে কবরীর বিপরীতে অভিনয় করেন। এরপর নায়ক হিসেবে তিনি ‘ভাড়াটে বাড়ি’, ‘বাংলার চব্বিশ বছর’, ‘রক্ত শপথ’, ‘কুমারী মন’, ‘মন নিয়ে খেলা’সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। এসব ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন সুজাতা, অলিভিয়া, কবিতা প্রমুখ। ‘ঝড়ের পাখি’, ‘জয়বাংলা’, ‘পাগলা রাজা’, ‘মৌ চোর’, ‘রাজদুলারী’, ‘জাদুনগর’, ‘রাই বিনোদিনী’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘মহেশখালীর বাঁকে’, ‘বানজারান’, ‘সাহেব’, ‘লড়াকু’সহ তিন শতাধিক ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। প্রয়াত অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার খান আতাউর রহমানের খুব প্রিয়ভাজন একজন শিল্পী তিনি। তাই সর্বশেষ তারই নির্দেশনায় ‘এখনো অনেক রাত’ ছবিতে তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
অভিনেতা কায়েস জানান, বর্তমানে কার্ডিওলজিস্ট ডা. ফখরুল ইসলাম ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. জোহার তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে চলচ্চিত্রে অনেক নামি-দামি শিল্পী-কলা কুশলী রয়েছেন। যারা ইচ্ছে করলেই এক সময়ের এই অভিনেতাকে চিরঅন্ধর হাত থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন। এক সময়ের এই গুণী অভিনেতা এভাবে নীরবে হারিয়ে যাবেন তা কি হতে পারে?