আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি ॥ বসে না থেকে কর্মের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়, এমন ধারণাকে সত্য প্রমাণিত করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার বহু পরিবার। তারা শুধু মাছের পোনা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, এক সময় এখানকার মানুষগুলো বেকার হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে থেকেছে। কিন্তু এখন তাদের সেই দিন নেই। এর মূল কারণ তারা কর্মের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। আগৈলঝাড়ায় ডিম থেকে পোনা মাছ উৎপাদন ও বিক্রি করে পাঁচ শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। এসব পোনা বিক্রির হাট বসে উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের গুপ্তেরহাট বাজারে। প্রতিদিন পোনা কিনতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ক্রেতারা আসেন এ হাটে। ভোর হতে না হতেই জমে ওঠে বাজার। যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে উন্নত জাতের মাছের ডিম এনে উপজেলার মাছ ব্যবসায়ীরা পুকুরে চাষাবাদ করে রেণু ফোটান। এসব রেণু দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি হলে বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, মনোসেক্স তেলাপিয়া, নাইলটিকা, কারফু, পাঙ্গাশ, চায়নাপুঁটি, টাটকিনাসহ প্রায় ১৫-২০ প্রজাতির পোনা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় পোনার চাহিদা।
অত্র এলাকার বিভিন্ন ফার্মের মালিক ও ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বাজারে প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে পোনা মাছ বিক্রি হয়ে আসলেও ৫-৬ বছর ধরে পোনা বিক্রির সুনাম জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। মৎস্য ফার্ম মালিক আবদুস সোবহান খান সাংবাদিকদের জানান, শত শত মৎস্য চাষি নালা, ডোবা, পুকুরে পোনার আবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। গুপ্তেরহাট বাজারে জেলা-উপজেলা থেকে এসে পোনা কিনে ট্রাক, মিনিট্রাক, নসিমন, ভ্যান যোগে নিয়ে বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার ও গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। এ বাজার থেকে স্বল্পমূল্যে পোনা কিনে অন্য বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন অনেকে। স্বল্পপুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় মানুষ অন্য পেশা ছেড়ে এ পেশায় ঝুঁকে পড়েছে।
বাজার কমিটির সদস্য জালাল ঘরামি জানান, ২৬ বছর ধরে তিনি এ বাজারে মাছের পোনা বিক্রি করে আসছেন। বর্তমানে মাছের খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর পোনা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। খাবারের মূল্য কম হলে পোনার দাম কম হতো। মাছের ক্রেতা মহিউদ্দিন খলিফা জানান, এ অঞ্চলের চাহিদা মেটানোর পর বিভিন্ন এলাকায় মাছের পোনা সরবরাহ করা হচ্ছে। আরেক ক্রেতা মনির সরদার জানান, প্রতিনিয়ত প্রায় শতাধিক ফার্ম মালিক মাছের পোনা এ বাজারে বিক্রির জন্য আসেন। ফার্ম মালিকেরা জানান, এটি এখন পোনা মাছ বিক্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাক, মিনিট্রাক, ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন নিয়ে পোনা কেনার জন্য আসেন ক্রেতারা। বর্তমানে প্রতিদিন সকালে গড়ে ১৫-২০ লাখ টাকার পোনা বিক্রি হয় বলে জানা যায়।
অপরদিকে এসব পোনা কিনে নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক বেকার যুবকক আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। মৎস্য চাষ করে বেকারত্ব যেমন দূর হচ্ছে পক্ষান্তরে দেশের মাছের চাহিদা মিটছে। এভাবেই একদিন এ জাতি এগিয়ে যাবে। স্বনির্ভর একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।