দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঠেলায় পড়েই হোক আর যে কারণেই হোক অবশেষে সোনালী ব্যাংক থেকে লোপাট করা সব টাকা ফেরত দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ। অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গ্রেফতারের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রিমান্ডে সব টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জানা গেছে, তানভীর প্রথমে লোপাট করা টাকার জামানত নিশ্চিত করার কাজ শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংককে ঝুঁকিমুক্ত করার পর সব টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করবেন। গত ২ সেপ্টেম্বর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তানভীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সরকারের টাকা আমি পাই টু পাই ফেরত দিব।’ এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রিমান্ডে এসে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এ লক্ষ্যে আত্মসাৎ করা ২,৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিপরীতে জমিসহ অন্যান্য সম্পদের দলিল বন্ধক রাখতে শুরু করেছেন তানভীর মাহমুদ। ইতিমধ্যে বন্ধক হিসেবে ৭০ একর জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। বন্ধক হিসেবে গ্রহণের জন্য আরও ১৬-১৭ একর জমির দলিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন সোনালী ব্যাংকের আইনজীবীরা। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে সমুদয় টাকার বিপরীতে সোনালী ব্যাংকে জামানত নিশ্চিত করবেন তিনি।
সূত্র জানায়, দুদকের রিমান্ডে তানভীর আত্মসাৎকৃত টাকার জামানত হিসেবে জমি, শিল্প-কারখানা, বাড়ি, গাড়ি, মেশিনারিজসহ প্রয়োজনে ৫ হাজার গরু বন্ধক রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জামানত নিশ্চিত করতে তানভীরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দুদক সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করছে সোনালী ব্যাংককে। জামানত দেওয়ার জন্য তানভীর দুদককে বলে দিচ্ছেন, তার কোন জমির দলিল কোথায় কার কাছে রেখেছেন। দুদককে দেওয়া এসব তথ্য অনুযায়ী জামানত গ্রহণ করতে শুরু করেছে সোনালী ব্যাংক।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আত্মসাৎ করা টাকার বিপরীতে প্রথমে ৬০ একর জমির দলিল জামানত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর জামানত হিসেবে গ্রহণ করা হয় সাড়ে ১০ একর জমির দলিল। আরও ১৬-১৭ একর জমির দলিল জামানতের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া হলমার্ক কর্তৃক পোশাক রফতানির বিপরীতে বিদেশ থেকে আসা ৪৭ কোটি টাকা গ্রহণ করেছে সোনালী ব্যাংক। রফতানির বিপরীতে শিগগির আরও ৭-৮ কোটি পাওয়া যাবে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও প্রদীপ কুমার দত্ত বলেছেন, ওই টাকা আদায়ের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ২০ বছর সময় চেয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন তানভীর মাহমুদ।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পুরো টাকার জামানত নিশ্চিত করার পর হলমার্ক সম্পর্কিত সব লেনদেন, হিসাব-নিকাশ, দাবি-দাওয়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পেশ করা হবে। পরিচালনা পর্ষদ থেকে বিষয়টি জানানো হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হলমার্কের ফাইলটি পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
সূত্র জানায়, দুদক তানভীরের দখলে ৬-৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদের হিসাব পেয়েছে। এর মধ্যে ২,৬৫০ কোটি টাকার জমি আছে তার নামে। ঢাকার মিরপুর এলাকায় রয়েছে ৫-৬টি বাড়ি, চালু ও নির্মাণাধীন ৭০টি গার্মেন্ট, ৮৬টি দামি গাড়ি, ৫ হাজার গরুসহ বিভিন্ন ধরনের সম্পদ রয়েছে তার নামে।
উল্লেখ্য, ব্যাংকিং খাতের সর্ববৃহৎ জালিয়াতির ঘটনায় হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির ও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার ডিজিএম একেএম আজিজুর রহমানসহ ২৭ জনকে আসামি করে গত ৪ অক্টোবর ১১টি মামলা করেছে দুদক। হলমার্ক কর্তৃক আত্মসাৎকৃত মোট ২,৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার মধ্যে প্রথমে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি (ফান্ডেড) টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওইসব মামলা করা হয়। এ মামলায় হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৪ আসামির রিমান্ড চলছে। এরপর নন ফান্ডেড ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করে হলমার্কের বিরুদ্ধে আরও মামলা করা হবে বলে জানা গেছে।