দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভয়াল রূপ নিয়ে ঘণ্টায় ৯০ মাইল বেগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি উপকূল অতিক্রম করেছে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি, যার আঘাতে শুরুতেই নিহত হয়েছে অন্তত ১০ জন।
পূর্ণিমার প্রভাবে রেকর্ড ১৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে নিউ ইয়র্ক শহরের নিচু এলাকা। পুরো আটলান্টিক সিটিও এখন প্রায় ৮ ফুট পানির নিচে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ম্যানহাটনের অধিকাংশ এলাকায়। পানিতে ডুবে গেছে বেশ কিছু সাবওয়ে টানেলও। এসব এলাকার পৌনে ৪ লাখ অধিবাসীকে ২৪ ঘণ্টা আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হলেও ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, মেরিল্যান্ড, পেনসিলভেনিয়া ও কনেকটিকাটে যে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পুলিশ দিয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন ঝড়ে গাছ পড়ে। স্যান্ডির আঘাতে কেবল নিউ ইয়র্কেই পাঁচজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন রাজ্যের গভর্ণর এন্ড্রু ক্যুমো।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন দুর্যোগ কবলিত এলাকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের খোঁজ-খবর রাখছেন। মোমেন বলেন, “মিশিগান, আটলান্টিক সিটি, ভার্জিনিয়া, বস্টন, নিউ ইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ডিসি, কানেকটিকাট, নর্থ ক্যারলিনায় বাংলাদেশিদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। কোথাও কিছু ঘটলে এবং খবর পেলে যতটা সম্ভব আমরা করার চেষ্টা করব।”
স্যান্ডি এগিয়ে আসতে থাকায় গত রোববারই যুক্তরাষ্ট্রের ছয় রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ছুটি ঘোষণা করা হয় সব স্কুলে। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সোমবারের সব কর্মসূচি বাতিল করা হয় এবং ট্রেডিং ফ্লোর বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
অবশেষে স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টার দিকে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ৬টা) নিউ জার্সি উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগ দুমড়ে মুচড়ে এগোতে থাকে স্যান্ডি। ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় অন্ধকারে রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ এই ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্যান্ডির কারণে নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ওয়াশিংটন, ডেলওয়ারে, কানেকটিকাট ও বস্টন বিমানবন্দরে গত তিন দিনে ১৪ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। গত বছরের অগাস্টে হারিকেন আইরিনের প্রভাবে ৪ দিনে মোট ১৪ হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইকিউইসিএটির প্রাথমিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে স্যান্ডির আঘাতে ক্ষতির পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
গত বছরের হারিকেন আইরিনের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। আর ২০০৫ সালে প্রলয়ঙ্করী হারিকেন ক্যাটরিনায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিমা বাবদেই দিতে হয়েছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ক্যারিবীয় সাগরে সৃষ্টি হওয়ার পর জ্যামাইকা ও কিউবার ওপর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাওয়ার পথে অন্তত ৬৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় স্যান্ডি। ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ক্যারিবিয়া অঞ্চলের এ দুই দেশে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার বলছে, হ্যারিকেন স্যান্ডি স্থলভাগে উঠে এসে এখন পোস্ট ট্রপিক্যাল ঝড়ের রূপ নিয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্যে তাণ্ডব চালিয়ে ও বৃষ্টি ঝড়িয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি পশ্চিম ভার্জিনিয়া, ভার্জিনিয়া ও কেন্টাকিতে ৩ ফুট পর্যন্ত তুষাপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে স্যান্ডির প্রভাবে।
এদিকে আগামী ৬ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও স্যান্ডি বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা এবং রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মিট রমনি দুজনেই প্রচারণা স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন। হোয়াইট হাউজ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা। তিনি দুর্যোগ কবলিত এলাকায় ন্যাশনাল গার্ড এবং পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিতে ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন। (সৌজন্যে: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)