দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের পোলট্রির বাজার ক্রমেই ভারতের দখলে চলে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, মাত্র তিন বছর আগেও বাংলাদেশ থেকে মুরগি রফতানির উপায় খুঁজছিলেন উদ্যোক্তারা। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশে হালাল গোশতের বাজার পেয়েছিলেনও তারা। কিন্তু মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের পোলট্রির বাজার এখন আমদানিনির্ভর। ভারত থেকে ডিম ও মুরগির বাচ্চা না এলে আমাদের একটি দিনও চলে না। কিছু বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্রের সাথে সরকারের একটি প্রভাবশালী মহল যুক্ত হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ দুই দশকে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। ভারত থেকে এখন কেবল ডিম আর মুরগিই আসছে না, আসছে সর্বনাশা বার্ড ফ্লুও!
ডিম ও মুরগির দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় গত রমজান মাসের আগে এ দু’টি পণ্যের আমদানি উন্মুক্ত করে দেয় সরকার। বিদেশ থেকে বাচ্চা আমদানির পথ উন্মুক্ত করা হয় তারও আগে। কিন্তু দিনের পর দিন উদ্যোক্তাদের জোর দাবির মুখেও বার্ড ফ্লুর ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি দেয়নি সরকার। এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারের একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ দেশের আট লাখ খামারের অর্ধেকই বন্ধ হয়ে গেছে। হারানো বাজার দখল করে নিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ভারতীয়দের এই সুযোগ করে দিতেই সরকার একের পর এক দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বার্ড ফ্লু আক্রান্ত ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, মহারাষ্ট্র, বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ পিস ডিম ও মুরগি আসছে বাংলাদেশে। সরকারের একটি বিতর্কিত সার্কুলারের সুযোগে এক শ্রেণীর ভারতীয় কারবারি সস্তায় কেনা এসব মুরগি ও ডিম বাংলাদেশে পাচার করছে। ওই সব ডিম ও বাচ্চার সাথে আসছে সর্বনাশা হাইলি প্যাথোজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও। এর মাধ্যমে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পোলট্রি শিল্পকে।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ জানান, সীমান্তবর্তী দেশ ভারতের ছয়টি রাজ্যে ব্যাপকভাবে বার্ড ফ্লু বিস্তার করায় এদেশীয় খামারি, হ্যাচারি ও ব্রিডার ফার্মগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছর বার্ডফ্লুতে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তার কারণে দেশীয় পোলট্রি শিল্প এমনিতেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, এ অবস্থায় পাশের দেশের সীমান্ত পেরিয়ে বৈধ কিংবা অবৈধ পথে আবার যদি বার্ডফ্লু আক্রান্ত বাচ্চা ও ডিম আসে তবে তা এদেশীয় পোলট্রি শিল্পের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে।
ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অব অ্যানিমেল হেলথ (ওআইই)-এর প্রতিবেদন উল্লেখ করে পোলট্রিবিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক এবং ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, মহারাষ্ট্র, বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খন্ডে হাইলি প্যাথোজেনিক অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এইচ-৫এন-১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া গত জুলাই মাসে আসামে এবং আগস্টে পশ্চিমবঙ্গে এ ভাইরাসের সংক্রমণে অসংখ্য মুরগি ও ডিম ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে আমরা লক্ষ করেছি সীমান্তবর্তী আক্রান্ত এলাকার খামারিরা মুরগি ও ডিম অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। এক শ্রেণীর কারবারি সস্তায় কেনা এসব মুরগি ও ডিম বাংলাদেশে পাচার করেছে।
অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ভারতসহ মোট ছয়টি দেশকে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা অর্থাৎ বার্ডফ্লু আক্রান্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসব দেশের অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে মুক্ত হতে অন্তত ১০ বছর কিংবা তারও বেশি লাগবে। এ জন্য আগামী অন্তত ১০ বছরের জন্য এসব দেশ থেকে এক দিন বয়সী বাচ্চা, মুরগি, ডিম ও হ্যাচিং ডিম আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।