দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক ॥ প্রতি সপ্তাহের মতো আজও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মজার মজার খবর আপনাদের সামনে তুলে ধরবো- আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
বিশ্বে মৃতদেহ সৎকারের আজব রীতি’র কয়েকটি কাহিনী ঃ
সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে মৃতদেহ সৎকারের নিয়ম চলে আসছে। তবে সব দেশের সৎকার রীতি এক নয়। ধর্মীয় বিধি-বিধান, লোকাচার ও প্রথাগত কুসংস্কারের কারণে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের সৎকার নিয়ম চালু রয়েছে। আর রয়েছে কিছু আজব রীতি। যা শুনলে ভিমরি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়! আজ আমরা সে সব আজব আজব সব সৎকার কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
মেক্সিকো
নিউ মেক্সিকোর ‘পিলে বেলু’ গোত্রের কারও মৃত্যু হলে প্রথমে মদপানের ব্যবস্থা করা হয়। তারপর একজন জ্যোতিষী মৃতের মাথা থেকে এক গোছা চুল কেটে নিয়ে কবর খুঁড়তে যায়। মৃতব্যক্তির ঘর থেকে কবর পর্যন্ত খাবার ভর্তি থালা পেতে দেয়া হয়। সবাই একসঙ্গে খাওয়া শেষে জ্যোতিষী মৃতব্যক্তির ব্যবহূত জিনিসপত্র গ্রামের বাইরে নিয়ে ফেলে আসে। তারপর মৃতের ঘরে জ্যোতিষী ‘ক্রস’ চিহ্ন এঁকে দেয়। এতে মৃতের আত্মা ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারে না বলে তাদের বিশ্বাস। এরপর মৃতদেহটিকে সমাহিত করা হয়।
পাপুয়া নিউগিনি
পাপুয়া নিউগিনির দু’টি গোত্র ‘ভিটাইয়া’ ও ‘বেলালু’-এর লোকজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগডা-বিবাদ লেগে থাকে। এক গোত্রে অন্য গোত্রের কাওকে খুন করতে পারলে হত্যাকারী গোত্রের লোকজন আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে। পুরুষরা পাখির পালক মাথায় দিয়ে এবং মেয়েরা মাথায় বনফুল গুঁজে নাচ-গান শুরু করে। অন্যদিকে মৃতের গোত্রের লোকজন নানা ধরনের উপহার সামগ্রী লাশের মাথার চারপাশে জমিয়ে রাখে। এক ব্যক্তি একটি তীরের মাথায় এক গোছা ঘাস বেঁধে সেটা শূন্যে নিক্ষেপ করে। পরে লাশটিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
প্যারাগুয়ে
ল্যাটিন আমেরিকার প্যারাগুয়েতে ‘আদ্দেগালু’ উপজাতীয়দের কেও মারা গেলে তার আত্মীয়স্বজনরা লাশটি কেটে রান্না করে খায়। হাড়গুলো জমা করে কিছুদিন ফেলে রাখে, তারপর একদিন সেগুলো পুড়িয়ে তার ছাইগুলো সযত্নে রেখে দেয়। এরকম করলে প্রেতাত্মা কোন ক্ষতি করতে পারে না বলে তাদের বিশ্বাস। এ দেশের ‘আজকুইরা’ গোত্রের কারও মৃত্যু হলে অন্যরা এসে মৃতের আত্মীয়স্বজনের মাথায় কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। এতে মৃতব্যক্তির প্রেতাত্মা দূর হয়ে যায় বলে তাদের ধারণা।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘লুথ’ নামে একটি গোত্র আছে। এ গোত্রের কেও মারা গেলে প্রথমে তার নাড়িভুঁড়ি বের করে সবাই স্যুপ রান্না করে খায়। এরপর মৃতদেহটি পাহাড়ের ওপর কিংবা সুবিধাজনক জায়গায় রেখে তা না শুকানো পর্যন্ত পালা করে পাহারা দেয়া হয়। শুকিয়ে অনেকটা শুঁটকির মতো হয়ে গেলে কেটে কেটে রান্না করে তা খাওয়া হয়।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মুসলমান, হিন্দু, খৃস্টান, বৌদ্ধদের সংখ্যায় বেশি এবং এদের ধর্মীয় আচার-আচরণও অত্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মেই চলে। সৎকার দাফনও তাই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সুস্থ-সুন্দর রীতি অনুযায়ী পালিত হয়। তারপরও কিছু অন্যধর্মীয় জনবাসীও রয়েছেন। যাদের আচার-আচরণ একেবারেই অন্যরকম। বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে মারমা উপজাতির বসবাস। এই সমপ্রদায়ের কারও মৃত্যু হলে প্রচুর মদ খেয়ে নাচ-গানসহ শবদেহ নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। রঙিন কাগজে সাজানো বাঁশ ও কাঠের তৈরি পালকিতে শবদেহ রেখে ২০-২৫ জন লোক সেটা বহন করে নিয়ে যায়। পালকির সামনে থাকে পুরোহিত এবং বহনকারীদের মাথায় থাকে পাগড়ি। শববাহী পালকির আগে পিছে বাজনার তালে তালে বিচিত্র নাচগান পরিবেশিত হয়। এভাবে দীর্ঘক্ষণ আনন্দ উল্লাস শেষে পালকিসহ মরদেহটি পুড়িয়ে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
মায়ানমার
মায়ানমারের একটি গোত্রের মধ্যে মৃতদেহ সৎকারের এক ভয়ঙ্কর রীতি চালু রয়েছে। এই গোত্রের কারও মৃত্যু ঘটলে ফুটন্ত তেলে লাশটি ছেড়ে দেয়া হয়। তেলে মৃতদেহের চর্বি ও গোশত গলে যাওয়ার পর উপস্থিত লোকজনের মধ্যে সেই তেল বিতরণ করা হয়।
তিব্বত
নেপাল ও ভুটান রাজ্য সংলগ্ন তিব্বত সীমান্ত এলাকায় বাস করে এক অদ্ভুত আদিবাসী। যার নাম সোরপা। তাদের সমাজে কারও মৃত্যু ঘটলে এরা এক ধরনের মন্ত্র পাঠ করে। এতে মৃতদেহের ভেতর থেকে আত্মা মাথা দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে তাদের বিশ্বাস। এরপর লাশটিকে বসানোর মতো করে বেঁধে রেখে তার সামনে বাতি জ্বালানো হয়। সেই বাতির আলোয় লাশের চারদিকে বসে সবাই খাওয়া-দাওয়া করে। পরে লাশটিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তিব্বতীদের মধ্যে আরও ভয়ানক সৎকার রীতি প্রচলিত রয়েছে। মৃতদেহকে পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি একটি সমতল স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পেশাদার একজন লোক দীর্ঘ ধারাল ছুরি দিয়ে মৃতদেহটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে। এরপর গোশতের টুকরোগুলো শকুনকে খাওয়ানো হয়। তিব্বতীদের বিশ্বাস, এতে মৃতব্যক্তি স্বর্গীয় সমাধি লাভের মাধ্যমে অমর থাকে। (তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর)