দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের অনুমতির মূলে রয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। দু’দেশের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে আর কোন চালান ত্রিপুরা যেতে বাংলাদেশ অনুমতি দেবে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের এমন অবস্থান বিস্ময়কর। অনলাইন দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত ‘তিস্তা রিভার প্যাক্ট কি টু শিপ গ্রেইনস টু এন-ই ভায়া বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।
সমপ্রতি শান্তনু স্যানালের লেখা ওই রিপোর্টে বলা হয়, ভারতের খাদ্য করপোরেশন বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে আগরতলায় ১০ হাজার টন চাল পরিবহনের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। কিন্তু নৌপথে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে যারা পণ্য পরিবহন করেন তারা মনে করেন খাদ্য করপোরেশনের ওই উদ্যোগ সফল হবে না। নৌপথে পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ভারতীয় পতাকাবাহী নৌযান আশুগঞ্জ বন্দরে অনুমোদন দেয় নি। এবারও গত বছরের মতো উদ্যোগ সফল হবে না বাংলাদেশের আপত্তির কারণে। বাংলাদেশের ওই অবস্থানের এখনও কোন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ কর্তৃপক্ষের এভাবে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করতে না দেয়ার ঘটনা বিস্ময়কর। কারণ, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ প্রটোকল অন ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট-এর আওতায় রয়েছে আশুগঞ্জ। এর ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কার্গো ব্যবহার করে ভারতে পণ্য পরিবহন অনুমোদিত। সমপ্রতি এর অধীনেই ওএনজিসি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিশাল একটি চালান আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরার পালটানায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ভিন্ন অবস্থানের বাস্তব কারণ অন্যখানে। সূত্র বলেন, তিস্তা চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় এসব চালান বাংলাদেশ আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে নিতে দেবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর সুযোগ নেই। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে রয়েছে খাদ্যঘাটতি। এ জন্য ভারতের খাদ্য করপোরেশন সেখানে খাদ্যশস্যের বিশাল চালান পাঠাতে চায়। ওদিকে কলকাতা থেকে রেলপথে গুয়াহাটি হয়ে আগরতলা বিশাল দূরত্ব। ১৬০০ কিলোমিটারের বেশি পথ। এতে খরচও অনেক বেশি। অন্যদিকে সড়কপথে আগরতলা থেকে আশুগঞ্জ মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। এ জন্য ত্রিপুরায় খাদ্যশস্য খুব কম খরচে পাঠানো যায় নৌপথে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ এবং পরে আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আগরতলায়। এ রুটেই সবচেয়ে কম খরচ। পরীক্ষামূলক চালান সফল হওয়ার পরে খাদ্য করপোরেশন এই রুটেই বেশির ভাগ খাদ্যশস্য স্থানান্তর করার পক্ষে। এছাড়াও বিকল্প একটি রুট আছে। তাহলো কলকাতা থেকে নৌপথে আসামের করিমগঞ্জ। তা-ও বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে যেতে হবে। একবার পণ্য করিমগঞ্জ পৌঁছার পর সেখান থেকে তা সড়ক পথে আগরতলা নেয়া সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে পাড়ি দিতে হবে ২৭৫ কিলোমিটার পথ। ফলে খরচের কথা চিন্তা করে এটি সুবিধাজনক রুট নয়। তাছাড়া, এই রুটে কুশিয়ারা (বাংলাদেশের)-বরাক (আসামের) অংশে পানির স্তর নভেম্বর থেকে নামতে শুরু করে। অন্যদিকে আশুগঞ্জে সারা বছরই পানি থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। তথ্যসূত্র: দৈনিক মানবজমিন।