দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক ॥ প্রতি সপ্তাহের মতো আজও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মজার মজার খবর আপনাদের সামনে তুলে ধরবো- আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
রঙিন ডানার প্রজাপতি
স্কুল ফাঁকি দিয়ে কিংবা খা খা রোদের কোনও নিঝুম দুপুরে পাটকাঠির মাথায় আঠা লাগিয়ে প্রজাপতির পেছনে ছোটেনি এমন শৈশব খুব কম লোকেরই আছে। কী এমন আছে প্রজাপতির মধ্যে, যার জন্য বাবা-মায়ের চোখ রাঙানি কিংবা গা-পোড়ানি রোদকে থোড়াই কেয়ার করে ছোটরা ওর পেছন পেছন ছুটে বেড়ায়? কী নেই ওর মধ্যে? প্রকৃতির বিস্ময়কর এক সৃষ্টির নাম প্রজাপতি। ওরা যখন ডানা মেলে বাতাসে নেচে নেচে উড়ে বেড়ায়, পথের পাশের কোনও ছোট গাছের পাতায় বসে ফুলেদের সঙ্গে গল্প করে তখন কী যে দারুণ লাগে। যেমন তার রঙিন ডানা তেমন তার বাহারি নকশা। অনেকের ধারণা, ডানার এমন রঙ আর নকশা দিয়েই ছোটদের খুব কাছে টানে ওরা। সেটা হয়তো করে কিন্তু ওদের বাহারি নকশা আঁকা ডানার আরও অনেক কাজ আছে। ওরা যে রোদে রোদে ঘুরে বেড়ায় তা কিন্তু এমনি এমনি নয়। বেঁচে থাকার জন্য রোদ ওদের খুব দরকার। নকশা আঁকা এই রঙিন ডানা দিয়ে ওরা রোদ খেয়ে (শোষণ) বেঁচে থাকে। কে কোন পরিবারের সদস্য কিংবা কে কার আত্মীয় সেটা চেনার জন্যও নকশা আঁকা ডানা দারুণ সাহায্য করে। দুরন্ত কিশোর যেমন মজা করার জন্য ওদের পেছন পেছন ছুটে বেড়ায় তেমনি প্রকৃতির আরও অনেক সদস্য আছে যারা প্রজাপতিদের খাওয়ার জন্য হা করে থাকে। বিশেষ করে পাখিদের কাছে প্রজাপতি খুব প্রিয় খাবার! ওরা তাই সুযোগ পেলেই প্রজাপতিদের ধাওয়া করে বেড়ায়। এ ধরনের পাখিদের চোখ এড়িয়ে প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে থাকার জন্য নকশা আঁকা রঙিন ডানা প্রজাপতিদের খুব উপকার করে। মাঝে মাঝে এটা অনেক শত্রুকে ভয় দেখানোর কাজেও ব্যবহার করা যায়। রঙিন মানেই ওটার মধ্যে কোনও বিষ আছে, স্বাদটাও কেমন বিশ্রী রকমের তেতো। এসব বলেই ওয়াক থু করে অনেক শত্রুপাখি বা প্রাণী ওদের ছায়াও মাড়ায় না।
রহস্যময় পাহাড় বায়ান-কারা-উলা
পাহাড়ে কত রহস্যই না জমা হয়! এই রহস্যগুলোর সিংহভাগই থাকে আমাদের চোখ বা জ্ঞানের বাইরে। চীনের বায়ান-কারা-উলা পর্বতমালার ঘটনা যেমন! আজ থেকে ৬০ বছরেরও আগে চীনের এই অঞ্চলে একটা প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান চালাচ্ছিলেন চি পু তেই এবং তার দল। হঠাৎই তারা এক সারি গুহার খোঁজ পান। তবে গুহাগুলো বিস্তারিতভাবে খুঁজে দেখতে গিয়েই চমকে যান তারা। গুহার মধ্যে ছিল বেশ কয়েকটি সমাধি এবং তার মধ্যে কিছু অদ্ভুত কংকাল, যাদের মাথাটা অস্বাভাবিক রকমের বড়, সরু পা এবং শীর্ণ চেহারা। প্রথমে বাঁদর গোষ্ঠীর প্রাণী বলে ভুল করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। পরে তারা বুঝতে পারেন বাঁদররা কখনও নিজেদের সমাধি দেয় না। তার ওপর এই সমাধি থেকে কিছু পাথরের চাকতি পাওয়া যায়, যেগুলো গ্রামাফোন রেকর্ডের মতো দেখতে। চাকতিগুলোর মাঝখানে ছিল একটা গোল ছিদ্র। কিন্তু চাকতিটির আকার এবং শৈলী দেখে সবাই আন্দাজ করেছিলেন, এ জিনিসটি নিঃসন্দেহে খুব উন্নত মানুষের কীর্তি। চাকতির ওপর খুদে-খুদে হরফে কিছু লেখাও ছিল। ৭০০টিরও বেশি চাকতি উদ্ধার করা হয় এ গুহা থেকে। কিন্তু ঘটনা জমে ওঠে বছর কুড়ি পর। চাকতির উপরের লিপির রহস্য কেউ পাঠোদ্ধার করতে পারেননি। অবশেষে সুম উম নুই লেখাগুলোর পাঠোদ্ধার করেন এবং চমকে যান। নুইয়ের আবিষ্কৃত তথ্য এতই বিস্ফোরক ছিল যে, সরকারি মহল থেকে তা নাকি চেপে যাওয়া হয়।
পরে জানা যায়, এই চাকতিগুলোর লেখা ভিনগ্রহীদের কাণ্ড! লেখা অনুযায়ী বায়ান-কারা-উলায় ভিনগ্রহীরা এসেছিল। কোনও কারণে তাদের মহাকাশযানটি ভেঙে পড়ে। ফলে সেই ভিনগ্রহীদের ফিরে যাওয়ার রাস্তাও এক অর্থে বন্ধ হয়ে যায়। এ অঞ্চলে নাকি বেঁটে, হলুদ রঙের মুখওয়ালা একটি লোকের কিংবদন্তি আছে, যে নাকি আকাশ থেকে নেমে এসেছিল। এই ভিনগ্রহীদের চেহারা এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, সেই অঞ্চলের উপজাতি গোষ্ঠী তাদের আক্রমণ করে। চাকতিতে বর্ণিত ভিনগ্রহীদের চেহারার সঙ্গে নাকি বায়ান-কারা-উলার সেই গুহার কংকালের সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে। তবে কি সেই কংকালগুলো আসলে মানুষের নয়? এই তথ্যই কি প্রমাণ করে প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে ভিনগ্রহীদের যোগাযোগ ছিল? সঠিক জানা যায় না।
তবে মজার ব্যাপার হল, তিব্বত এবং চীনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ‘ড্রোপা’ নামের এক উপজাতি আছে। এই ড্রোপাদের সম্পর্কে বলা হয়, তাদের পূর্বপুরুষরা নাকি আকাশের তারা থেকে নেমে এসেছিলেন। বায়ান-কারা-উলা দুর্গম জায়গা, সেই অঞ্চলের প্রকৃতির সঙ্গে এই রহস্য ভীষণ মানানসই। ভিনগ্রহীরা কি সত্যি এসেছিল বা ড্রোপারা সত্যিই ভিনগ্রহীদের বংশধর কিনা, এই উত্তরগুলো বায়ান-কারা-উলার প্রকৃতি নিঃসন্দেহে জানে। কিন্তু সে রহস্য কখনওই ফাঁস করবে না।
ব্যাঙের ছাতা ব্যাঙের নয়
মাশরুম সাধারণভাবে ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত। মাশরুমের প্রকৃত দেহ mycellium নামের আণুবীক্ষণিক সূক্ষ্ম সুতার মতো একটি কাঠামো, যা কোনও ভিতবস্তুর উপর বা মাটির নিচে জন্মায়। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় অনেকগুলি mycellium একত্রে একটি নিরেট কাঠামো গড়ে তোলে এবং মাটির উপরিভাগে উঠে ছাতার আকৃতি ধারণ করে। অধিকাংশ ব্যাঙের ছাতা Basidiomycetes শ্রেণীর অন্তর্গত, যাদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছাতা আকৃতির কাঠামোর নিচে স্পোর-রেণুধর ফুলকার (gill) অবস্থান। বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতাকে টোডস্টুল (toadstool) বলে। কোনও কোনও প্রজাতি কচি অবস্থায় খাদ্যযোগ্য থাকলেও পরিণত বয়সে বা পচতে শুরু করলে বিষাক্ত বা খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সাধারণ খাবার উপযোগী মাশরুম Agaricus ও Pleurotis গণের প্রজাতি। এতে প্রোটিন, শর্করা, মূল্যবান লবণ ও নানা ভিটামিন বিদ্যমান থাকে। এসব উপাদান থাকায় ও কম ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় ব্যাঙের ছাতা হূদরোগীদের চমৎকার পথ্য। বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রায় ২০ প্রজাতির ব্যাঙের ছাতার মধ্যে ৫-৬টি বিষাক্ত। বিষাক্ত প্রজাতি Lepiota ও Amanita গণের অন্তর্ভুক্ত। বনজ কিছু ব্যাঙের ছাতা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা খেয়ে থাকে। অতি সম্প্রতি কয়েকটি ছোট খামারে মাশরুমের চাষ চলছে। মাশরুম চাষ প্রাচীন গ্রিক, রোম ও ভারতীয় সাহিত্যে ব্যাঙের ছাতা রাজন্যবর্গের একটি লোভনীয় খাদ্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বিশ শতকের শুরুতে ইউরোপেই প্রথম মাশরুমের বাণিজ্যিক চাষ শুরু, আর বাংলাদেশে হয়েছে অতি সম্প্রতি। বিগত শতকে আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের উদ্যোগে মাশরুমের চাষ শুরু হয়, এরপর সাভারে ‘মাশরুম চাষ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। চাষের জন্য অনুমোদিত প্রজাতিগুলো White buton mushroom (Agaricus bisporus) এবং Oyster mushroom/Wood fungus (Pleurotis sajor-caju, P. flabellatus, P. ostreatus) বাংলাদেশে অয়েস্টার জাত সহজলভ্য ও অধিক জনপ্রিয়। চাষের প্রধান উপকরণ ধানের খড়, তুষ, করাতের গুঁড়া, তুলার বর্জ্য ও অন্যান্য কৃষিজ উপজাতের মিশ্রণ। পাকাঘর বা কুঁড়েঘরে পলিথিনে চাষ করা যায়। পুরো প্রস্তুতিতে লাগে ৩৫ দিন। বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। সারাবছর জুড়ে চাষ করা যায়, তবে অয়েস্টার জাত কেবল শীতকালে চাষযোগ্য। একটি চাষ থেকে অবিরাম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ফসল পাওয়া যায়। ব্যাঙের ছাতা তাজা রান্না করা কিংবা শুকিয়ে সংরক্ষিত রাখা যায়।