দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক ॥ প্রতি সপ্তাহের মতো আজও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মজার মজার খবর আপনাদের সামনে তুলে ধরবো- আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
জেরিকো শহরের দেয়াল আর মঠ
জর্ডান নদীর ধারে অবস্থিত এই জেরিকো শহরের উল্লেখ পাওয়া যায় বাইবেলে ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এ। সেখানে শহরটি ‘তালগাছের শহর’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো শহরগুলোর যদি হিসাব করা হয়, জেরিকো তার মধ্যে অনায়াসে চলে আসবে। জেরিকো শহরের রাস্তাঘাট গাছে ঢাকা বীথির মধ্যে সেই প্রাচীন ছাপ বর্তমান। তবে জেরিকো শহরের তাক লাগানো বৈশিষ্ট্য রয়েছে অন্য জায়গায়। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে জানা গেছে, জেরিকো শহরের চারপাশের এক প্রাচীন দেয়াল ছিল, যার উৎপত্তি সেই ৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত জর্ডানের অধীনে এই শহরটি ছিল। ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইলিরা দখলে নেয় এই শহরটি। এর পেছনে আর একটি রোমাঞ্চকর গল্প আছে, যা বর্ণনা পাওয়া যায় ওল্ড টেস্টামেন্টে। বর্ণনাটি এরকম- ইসরাইলিরা অনেক ঘোরাঘুরির পর এই জায়গায় পৌঁছান। শহরের চারপাশে ছিল একটি দেয়াল। ইসরাইলিরা টানা ছ’দিন একবার করে দেয়ালটি প্রদক্ষিণ করেন। সপ্তম দিনে তারা মোট সাতবার শহরটি ঘোরেন। সপ্তমবার পুরোহিতরা শিঙায় ফুঁ দেন, সবাই চিৎকার করে ওঠেন এবং শহরের দেয়ালটি পড়ে যায়। তখন ইসরাইলিরা আক্রমণ করে শহরে আগুন ধরিয়ে দেন। বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের পর দেয়ালের ভগ্নাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে এবং এ বিষয়ে কেও বিশেষ সন্দেহ প্রকাশ করেননি। তাহলে শহরের দেয়াল পড়ে যাওয়ার ঘটনাটা কি সত্যি? জেরিকো গেলে এ প্রশ্নটা যেন অজান্তেই মাথায় ঢুকে পড়ে। জেরিকো শহরের ওপর সর্বদা চোখ রেখে এসেছে একটি মঠ! জেরিকোর বাইরে পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ‘মনাস্ট্রি অফ টেম্পটেশন’, দূর থেকে দেখে মনে হয়, খাড়া পাথরের গায়ে সরু ফিতার মতো ছড়িয়ে রয়েছে মঠটি। জেরিকো শহরের দেয়াল এখন আর নেই। কিন্তু মঠ দূর থেকে শহরটির ওপর নজর রেখে চলেছে।
মানুষের মুখের মতো গুহা
যুক্তরাজ্যে নরমুণ্ড আকৃতির একটি গুহার সন্ধান পাওয়া গেছে। এই গুহাটি নিয়ে প্রায় হইচই পড়ার মতো অবস্থা হয়। অশুভ ও প্রাণসংহারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে যুক্তরাজ্যের ‘হডজ ক্লোজ কুইয়ারি’ পার্বত্য গুহাটি। মানুষের মনে এই গুহাটি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সবারই প্রশ্ন, কী আছে আসলে এই গুহাটিতে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গুহাটি আসলে জলমগ্ন। এর অবস্থান দেশের ক্যামব্রিয়া অঞ্চলের কোনিস্টন প্রশাসনিক এলাকার দুর্গম পর্বতে। আরও ভয়ঙ্কর ঘটনা হল, অনেক ডুবুরি এই গুহার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। কিছুদিন আগে একজন দুঃসাহসী ফটোগ্রাফার এবং ডুবুরি নরমুণ্ড গুহার ছবি তুলে এনেছেন। শুধু ছবি তুলতে গিয়ে বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ফিরে না এসে শেষ অবধি গুহার ছবি তুলে এনেছেন। নিজেদের তোলা ছবি দেখে তারা নিজেরাই পরে আঁতকে উঠেছেন। দেখেছেন ছবিতে উঠে এসেছে নরমুণ্ডের আকৃতিযুক্ত গুহার মুখ। গুহার জল বরফের মতো ঠাণ্ডা, তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর দৈর্ঘ্য ২৫ মিটার এবং গোলাকৃতি গহ্বরের আয়তন দুই বর্গমিটার।
প্রতি বছরই ডুবুরিরা এ গুহার রহস্য উদঘাটনের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অভিযান চালান। এ গুহায় অভিযান চালাতে গিয়ে বহু ডুবুরির মৃত্যুর খবর মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। গত বছরও তিনজন ডুবুরি এ গুহায় অভিযান চালাতে গিয়ে মারা গেছেন। তাতেও কিন্তু রহস্য উদঘাটনের নেশা তাদের মধ্য থেকে যায়নি। এ কারণেই স্থানীয় লোকদের কাছে এটি ভুতুড়ে ও অলক্ষুণে স্থান হিসেবে পরিচিত। যেসব ডুবুরি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পাননি তাদের এ বিপজ্জনক গুহায় শখের বশবর্তী হয়ে নামতে নিষেধ করা হয়। কারণ প্রশিক্ষণগত দুর্বলতার কারণেই গত বছর তিনজন ডুবুরির মৃত্যু হয় বলে অনেকেরই ধারণা।
একটি জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, সম্ভবত ২০০৫ সালে একজন ডুবুরি এ গুহার জলের নিচে মানুষের মতো দেখতে কিছু একটা প্রত্যক্ষ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সে সময় ওই জ্ঞান হারানো ডুবুরিকে জল থেকে তুলে আনতে এগিয়ে এসেছিলেন কোনিস্টন মাউন্টেইন রেসকিউ টিমের সদস্যরা। তারা অনেক চেষ্টা করে ওই ডুবুরিকে অসুস্থ অবস্থায় জল থেকে উদ্ধার করেন। শুধু তাই নয়, ফটোগ্রাফার পিটার বার্ডস্লে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা তাক করে গুহাটির ছবি তোলেন বলে জানা গেছে। স্টুডিওতে ছবিটির কাজ শেষ করার পর তিনি ছবিটি দেখে অবাক হয়ে যান। কারণ ছবিটি দেখতে অবিকল নরমুণ্ডের মতো। সেই ফটোগ্রাফার মন্তব্য করেছিলেন, ইন্ডিয়ানা জোন্স চলচ্চিত্রের মতো আমার মনে হয় কোন স্থিরচিত্র দেখছি। ছবিটি তুলতে গিয়ে কোন কারসাজি করা হয়নি। হঠাৎ দেখলে নরমুণ্ডের আকৃতিসম এই গুহাটি দৈত্য-দানবদের কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেকেই দেখে আঁতকে উঠতে পারেন।
দূর আকাশের সন্ধ্যাতারা
বুধ গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দে। সর্বপ্রাচীন রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ব্যাবিলনিয়রা এ গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান করে। তারা এটিকে গু-উটু নামে ডাকত। প্রাচীন গ্রিকরা এটির দুটো নাম দিয়েছিল। পূর্বাকাশে যখন এটি দেখা যায় তখন এটিকে এপোলো এবং সন্ধ্যাকাশে যখন দেখা যায় তখন এটিকে হারমিস নামে ডাকা হতো। আবার হেরাক্লিটাস মনে করতেন বুধ এবং শুক্র গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, পৃথিবী নয়। বুধ গ্রহের অনুসন্ধান একটি কঠিন কাজ। কারণ এটি সূর্যের খুবই নিকটবর্তী। ফলে পৃথিবী থেকে এটি শুধু সূর্যোদয়ের সময় এবং সূর্য ডোবার পর দেখা যায়। জোর্তিবিদ্যার কল্পকাহিনীতে বুধকে রোমানদের দেবতা হারমিসের প্রতিরূপ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। হারমিস ছিলেন অন্য দেবতাদের দূত এবং এজন্যই বুধ গ্রহকে সাধারণত পাখাওয়ালা চপ্পলসহ চিত্রিত করা হয়। বুধ গ্রহ বার্তা বহন করে এবং এটিকে ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের রক্ষক বলে বিশ্বাস করা হতো। বুধ গ্রহে একজন মানুষের ওজন আশ্চর্যজনকভাবে কম মনে হবে। বুধ গ্রহ সূর্যের চেয়ে আকারে অনেক ছোট, এ জন্য এর আকর্ষণশক্তিও কম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পৃথিবীতে কারও ওজন যদি ৭০ পাউন্ড হয় তাহলে বুধ গ্রহে হবে ২৭ পাউন্ড। বুধ সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রহ। ফলে পৃথিবীর মানুষ এটি রাতে দেখতে পায়। সাধারণত ভোরে সূর্য ওঠার পূর্ব মুহূর্তে বুধ গ্রহ উজ্জ্বল দেখায়। সূর্য ডোবার পর কিছুক্ষণ এটি দেখা যায় বলে বুধ গ্রহকে সন্ধ্যাতারাও বলা হয়।
বুধ গ্রহে প্রচুর লোহা রয়েছে। এটি প্রকৃত অর্থে সরু সিলিকেট আবরণে ঢাকা একটি বিরাট লোহার বল। যখন বুধ গ্রহের লোহা ঠাণ্ডা হয়ে যায় তখন এটির পাথুরে আবরণ কুঁচকে যায়। বিজ্ঞানীরা এ কুঁচকানো অবস্থাকে বলে লোবেট স্কারপেস। বুধের বহিবারণে অসংখ্য বিশাল গর্ত রয়েছে যা গ্রহাণু এবং ধূমকেতুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। সৌরলোকের যে কোনও গ্রহে এরকম ক্ষত সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। অনেক গ্রহেরই এরকম ক্ষত পূরণের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বুধ একটি মৃত গ্রহ এবং এর তেমন পুরো বায়ুমণ্ডল এবং আগ্নেয়গিরি নেই বলে এর ক্ষত সারানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। বুধের পুরো বায়ুমণ্ডল নেই, এটি ছোট আকারের বলে এর আকর্ষণশক্তিও কম। ফলে যে কোনও গ্যাসের উদ্ভব হলে তা মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। বুধ গ্রহের বায়ুমণ্ডল সরু বলে গ্যাসের অণু বুধের আবরণের সঙ্গে এবং নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ফলে মনে হয় এর কোনও বায়ুমণ্ডল নেই। বুধ গ্রহের বায়ুমণ্ডলের উপাদান প্রতিনিয়ত মহাশূন্যে হারিয়ে যাচ্ছে। পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম অণুর গড় আয়ুষ্কাল বুধ গ্রহের ৩ ঘণ্টা। বুধ গ্রহের তুলনামূলক শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। এ চৌম্বুক ক্ষেত্র সম্ভবত পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের মতো চলমান কোনও ধাতব অণুর ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট। গবেষকরা দেখেছেন যে, বুধ-এর অভ্যন্তর ভাগ তেমন গরম নয় যাতে নিকেল-লোহা গলাতে পারে। কিন্তু সালফারের মতো কম গলনাংকের কোনও বস্তু এক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করে। বুধের উপরিভাগের গড় তাপমাত্রা ৪৫২ কেলভিন, যা ৯০ থেকে ৭০০ কেলভিন পর্যন্ত ওঠানামা করে। বুধের উপরিভাগে সূর্যালোকের প্রখরতা পৃথিবীর চেয়ে ৬.৩ গুণ বেশি এবং এর উজ্জ্বলতা ৩৫৬৬ ওয়াট/বর্গমিটার। বুধের কক্ষপথ অত্যন্ত অদ্ভুত বৃত্তাকার যার ব্যাসার্ধ ৪০ থেকে ৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার। দূরবীক্ষণের মাধ্যমে বুধের উত্তর মেরুতে কিছু পানি ও বরফের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ধূমকেতুর প্রতিক্রিয়ায় জমাকৃত এরকম পানি সার্বক্ষণিক ছায়াবৃত্ত গর্তের তলায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানির ওপরে নগর!
নগরের নাম ভেনিস। বাড়িগুলো একেবারে জলের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যেতে হলে নৌকা বা গন্ডোলা নিতে হয়। ভেনিসের জলপথই রাজপথ। দূরের জায়গার জন্য বড় বড় স্টিমার ক্যানেল বা খালের ভেতর দিয়ে চলাচল করে। খালগুলোও বেশ প্রশস্ত। বৃষ্টির সময় কখনও কখনও এখানকার বাড়ির দরজা পর্যন্ত জল ওঠে। তবে এ অবস্থা বছরের দু’এক মাস বাদ দিলে সারাবছরই থাকে। নৌকা অর্থাৎ গন্ডোলা বাঁধার জন্য সব বাড়ির সামনে বড় বড় কাঠের খুঁটি পোঁতা রয়েছে। যারা নৌকা চালায় এরা সাধারণত ফূর্তিবাজ হয়। নৌকা চালাতে চালাতে এরা গানও গায়। তবে মজার ব্যাপার ভেনিস শহরের ভেতরে ভেতরে গলি দিয়ে পাকা রাস্তা আছে। জলে যেমন সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যায়, স্থলপথে সেখানে অনেক ঘুরে যেতে হয়। দূরত্বও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আমাদের দেশের বাসের মতো স্টিমার সব বড় বড় খাল দিয়ে যাতায়াত করে। বিশেষ কোনও অসুবিধা হয় না। পৃথিবীর মধ্যে এ রকম জলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা শহর আর একটিও নেই। এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। ভেনিস বেশ পুরনো শহর। এ শহর যুগে যুগে ইতালির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। ইট-পাথর-কাঠ দিয়ে প্রথমে পাশাপাশি কিংবা একটু দূরে দূরে বড় বড় বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। তারপর খাল কেটে সমুদ্রের জল ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। সেইগুলো এখন জলপথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সানমার্কো এলাকায় হোটেলের ছড়াছড়ি। ভেনিসের বিশেষ দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সানমার্কো গির্জা, কাম্বানিল ও পাশেই ডোজের প্রাসাদ। গির্জার সামনের চত্বরটা বেশ বড়। চারদিকে একই রকমের কয়েকটি বাড়ি। কয়েকতলা বাড়ির প্রতিটির একতলায় দোকানপাট। চত্বরের এক প্রান্তে গির্জা। এটি দূর থেকে দেখলে মনে হয়, এ যেন এক জুয়েলারি বাক্স। আদ্যোপান্ত পাথর ও কাচ দিয়ে তৈরি। ভেতর ও বাইরে মোজাইক করা। এটি বাইজান্টাইন স্থাপত্যের অনুরূপ মনে হবে। গির্জাটি সান মার্কের নামে উৎসর্গকৃত। যুগ যুগ ধরে ট্যুরিস্টরা তীর্থযাত্রীর মতো এখানে এসেছে হাজারে হাজারে। যারাই এখানে আসেন তারা নৌকায় বসে চালকের কণ্ঠে গান শোনেন। এখানে অসংখ্য পায়রা রয়েছে। এরা মানুষকে ভয় পায় না। হাতের খাবার ঠুকরে তোলার চেষ্টার করে। সে এক চমৎকার দৃশ্য। এখানে প্রায় প্রতিটি বাড়িই কাম্পানিল ইটের গাঁথুনি করা প্রকাণ্ড উঁচু চতুষ্কোণ ইমারতের মতো। পাশেই সমুদ্র এবং অদূরে সেন্টজর্জ দ্বীপ স্পষ্ট দেখা যায়। সবচেয়ে বড় ক্যানেলটাকে গ্র্যান্ড ক্যানেল বলা হয়। গ্র্যান্ড ক্যানেল বা প্রশস্ত খাল সমুদ্রে এসে মিলেছে। এখানটা খুব চওড়া, দূরে মার্বেল দিয়ে তৈরি সুন্দর গির্জা জলের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নাম ‘মারিয়া দি লা সালুতে’, সানমার্কো গির্জা ও কাম্পানিলের মাঝামাঝি ডোজের প্রাসাদ। ডোজরা ভেনিসে রাজত্ব করত। কখনও কখনও তারা উত্তর ইতালি জয় করেছে এবং বিস্তীর্ণ এলাকার ওপর প্রভুত্ব চালিয়েছে। ডোজরা বড় একটি হলঘরের মাঝখানে বসে দেশ শাসন করত। ডোজদের বাড়ি এখন চিত্রশালা হয়েছে। লর্ড বায়রনের বাড়িও এ ভেনিসে। এখানকার সব নৌকা চালকই লর্ড বায়রনের নাম জানে।
মৃত্যুগুহার হাতছানি
মানুষখেকো গাছ, মাছ, প্রেতাত্মা ইত্যাদির কথা হয়তো অনেকেই শুনেছেন কিন্তু কখনও মানুষখেকো গুহার কথা শুনেছেন কি? হ্যাঁ, অবিশ্বাস হওয়ার মতোই কথা বটে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি। আমাদের এই পৃথিবীতে এমনই একটি গুহা আছে যেটি মানুষখেকো বা মৃত্যুগুহা নামে পরিচিত। আমরা যে গুহার কথা বলছি সেটিতে শুধু মানুষই নয়, যে কোন জীব এর ভেতরে ঢুকলে আর জীবিত বেরিয়ে আসতে পারে না। গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবোর মতে, প্রাচীন গ্রিক শহর হ্যারাপোলিসে অ্যাপোলো দেবতার একটি মন্দির ছিল। একসময় এটি নানা কারণে রহস্যময় মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। এই মন্দিরের পাশেই ছিল একটি গুহা। এই গুহাটির বৈশিষ্ট্য ছিল, গুহার ভেতরে কোন জন্তু-জানোয়ার ছুঁড়ে দিলে তা আর ফিরে আসত না। এমনকি কোন মানুষও যদি ওই গুহার প্রবেশদ্বার সামান্য অতিক্রম করে যেত, তবে সে আর ফিরে আসত না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, পুরোহিতরা এই গুহার ভেতরে নিরাপদে ঢুকতে এবং বেরোতে পারত। তবে তারা ফিরে এলে দেখা যেত তাদের মুখমণ্ডল ফুলে গেছে এবং রক্তাক্ত হয়ে গেছে। প্রাচীন গ্রিসের নাগরিকরা মনে করত ওই গুহাটি ছিল পরলোকে যাওয়ার পথ এবং সেখানে অপদেবতারা রাজত্ব করে। সাধারণ মানুষ বা জীব-জানোয়াররা সেখানে গেলে অপদেবতারা তাদের মেরে ফেলে আর দেবতারা গেলে তাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে অপদেবতাদের সঙ্গে লড়াই করে জিতে ফিরতে সমর্থ হয়। স্ট্রাবো এই তথ্যগুলো তার বইতে লিখে গেছেন ২০০০ বছর আগে। বর্তমান যুগের মানুষ ভূত, প্রেত বা অপদেবতায় বিশ্বাস করে না। বিজ্ঞানের কাছে এর কোন বাস্তবতা নেই। তাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তাহলে ওখানে কি এমন কিছু ছিল যার ফলে কোন লোক বা জীব ওই গুহার ভেতরে গেলে আর ফিরে আসত না? মানুষের মধ্যে অজানাকে জানার প্রতি একটা আগ্রহ বহু প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। সেই আগ্রহ বর্তমান যুগে কমেনি বরং আরও বেড়ে গেছে। স্ট্রাবোর পুঁথির সূত্র ধরে আমেরিকার নিউইয়র্ক কলেজের অধ্যাপক শেলডেন এ বিষয়ে সব থেকে নির্ভরযোগ্য নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ওই গুহার নিচে থেকে প্রাকৃতিকভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতো। এর ফরে কোন মানুষ বা জীবজন্তু গুহার ভেতরে প্রবেশ করলেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যেত। শেলডেনের এ নতুন তথ্য প্রকাশে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, তবে পুরোহিতরা ভেতরে গেলে মারা যেত না কেন? তার উত্তরও শেলডেন দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুরোহিতরা বিষয়টি আগে থেকেই জানত, তাই তারা এ গুহার ভেতরে ঢুকে দম বন্ধ করে থাকত এবং বাইরে এসে তাদের শক্তি, ক্ষমতার মহিমা প্রচার করত। সে কারণেই তারা বাইরে এলে তাদের মুখমণ্ডল গ্যাসের চাপে ফোলা এবং রক্তাক্ত দেখা যেত।
এই প্রাচীন শহরটি বর্তমানে পশ্চিম তুর্কিতে অবস্থিত। সেখানে তদন্ত করে দেখা গেছে, সেখানে আছে প্রচুর উষ্ণ প্রস বণ। তার মধ্যে আছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বনেট। অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে এর থেকে প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। বাষ্প এবং কর্বন-ডাই-অক্সাইড কোন ফাটল দিয়ে ঢুকে যায় গুহার ভেতর। এর ফলে গুহার ভেতরে কয়েক পা গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু সুনিশ্চিত হয়। অ্যাপোলোর মন্দিরের সেই রহস্যময় গুহাটি আজও আছে। কয়েক বছর আগে একদল অস্ট্রেলীয় ছাত্র অনুসন্ধিৎসাবশত ওই গুহার ভেতরে ঢুকেছিল পরীক্ষার জন্য। কিন্তু সত্যিই দুর্ভাগ্য ছিল তাদের। তারা আর ফিরে আসেনি। এর পর থেকে তুর্কি সরকার গুহামুখে লোহার পাত বসিয়ে দিয়েছে। যাতে আর কেও ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এ ধরনের আরও কত রহস্য লুকিয়ে আছে গুহার ইতিহাসে। যতই জানা যায় ততই অবাক হতে হয়।