Categories: সাধারণ

অপূর্ব এক পাতাল নগরীর কাহিনী

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ জায়গাটার নাম কুবার পেডি। এটি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র মাটির তলার নগরী। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত নগরী অ্যাডিলেড থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে কুবার পেডি অবস্থিত। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল কুবার পেডি এক সময় শতভাগ জনমানবশূন্য ছিল। এখনও এটি মানুষের বসবাস উপযোগী নয়। কারণ গ্রীষ্মে এখানকার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যায়। আবার শীতকালে তাপমাত্রা নেমে আসে শূন্য ডিগ্রিরও নিচে। এমন অবস্থায় মানুষের পক্ষে মানিয়ে নেয়া সত্যি কঠিন।

এতোকিছুর সঙ্গে আরও রয়েছে ধূলি ঝড়, পানির কষ্ট ইত্যাদি তো রয়েছেই। তাই কুবার পেডিতে মানুষ বসবাস করবে এটি কল্পনারও অতীত ছিল। কল্পনাতীত এই বিষয়টিই একসময় বাস্তব হয়ে ওঠে। সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কুবার পেডিতে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক একটি শহর। যে শহরটি মাটির ওপরে নয় নিচে অবস্থিত। আধুনিক নগরীর সুবিধা সংবলিত কুবার পেডিতে রয়েছে রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ক্লাব, ব্যাংক, আর্ট গ্যালারি, মার্কেট কমপ্লেক্স। পৃথিবীর যে কোনো আধুনিক শহরের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মতো সবই আছে সেখানে। তবে এখানকার এই জাঁকজমক একদিনে গড়ে ওঠেনি। এর পেছনে রয়েছে মজার এক গল্প। এই কুবার পেডির পাথুরে জমির সঙ্গে মিশে ছিল বিশেষ এক ধরনের রত্ন। এই রত্নের নাম- ওপাল। এই জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের চৌদ্দ বছরের এক কিশোর। ঘটনাটা ছিল ১৯১১ সালের। এই মজার আবিষ্কারের আগে এখানকার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। কিন্তু ওপালের অস্তিত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে শুরু করল কুবার পেডিকে।

ওপাল আবিষ্কারের পর বহু রত্নলোভী পাড়ি জমাল এখানে। রত্নের সন্ধানে শুরু হল খোঁড়াখঁ-ড়ি। আস্তে আস্তে কুবার পেডির বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়তে লাগলে। কুবার পেডি নামকরণের পেছনেও রয়েছে ছোট্ট একটি ইতিহাস। এখানকার আদিবাসীরা মাইনারদের খোঁড়াখুঁড়ি দেখে তাদের ভাষায় জায়গার নাম দিয়েছিল কুপা সিটি। যার অর্থ মাটিতে সাদা মানুষের গর্ত। কালের বিবর্তনে সেটাই বদলে গিয়ে কুবার পেডি হয়ে যায়। সব মরুভূমিতেই দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম আর রাতে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা থাকে। মাটির নিচে কিছুটা গেলেই অন্যরকম হয়ে যায় সবকিছু। পৃথিবী নিজেই যেন একটা প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার। তাই মাটির নিচে গড়পড়তা সহনশীল একটা তাপমাত্রা পাওয়া যায় সারা বছরই। অন্য দিকে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য মাইনারদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটাতে হয় মাটির নিচে। তাই সেখানে থাকার ঘরটাও বানিয়ে নিলে মন্দ কি!

Related Post

মাটির নিচে থাকলে ধূলিঝড় থেকেও বাঁচা যাবে। শুরু হল মাটির নিচে বসতি বানানো। এভাবেই গড়ে উঠেছে কুবার পেডি। শুধু থাকার জায়গা নয়, তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, পানি সমস্যার সমাধান। পানির ব্যাপারে কুবার পেডির জনগণ ভীষণ সচেতন। মরুভূমিতে পানির অভাবের কারণে তারা গোসল ও ধোয়ামোছার ব্যবহূত পানি রিসাইকেলের মাধ্যেমে সদ্ব্যবহার করে অন্যান্য কাজে। তবে এসব অসুবিধা সত্ত্বেও আজকের কুবার পেডি এতটাই জমজমাট যে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ট্যুরিস্টই এক ঝলক দেখে যান জাগয়াটি। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের তো কথাই নেই। বেশ কয়েকজন কুবার পেডিবাসী অন্যত্র বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েও কিছুকাল বাইরে কাটিয়ে আবার ফিরে এসেছে কুবার পেডিতে। অদ্ভুত সুন্দর এই পাতাল নগরী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।

This post was last modified on ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪ 8:17 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিলেন বেসিসের নতুন কমিটি

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন…

% দিন আগে

গ্রাম-বাংলার একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১…

% দিন আগে

ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু: দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইতিমধ্যেই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার…

% দিন আগে

জাতীয় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন সুরা কৃষ্ণ চাকমা ইউসিবিতে যোগদান করলেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক দশকেরও বেশি সময়ে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সুরা কৃষ্ণ চাকমা যেমন…

% দিন আগে

আইফার্মার ও ইউসিবি’র প্রকল্প: অগ্রিম ঋণ পরিশোধ করলেন ভুট্টা এবং মরিচ চাষিরা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভুট্টা এবং মরিচ চাষিদের জন্য ব্যাংক অর্থায়ন ও ঋণ পরিশোধের…

% দিন আগে

‘সংবাদ’ নিয়ে বড়পর্দায় ফিরছেন ‘এই তো প্রেম’ নির্মাতা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সুপারস্টার শাকিব খান এবং বিন্দুকে নিয়ে ‘এই তো প্রেম’ নির্মাণ…

% দিন আগে