দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব। ব্যর্থ হয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি। এরপর মাকে পিটিয়ে ফিল্মি কায়দায় মেয়েকে অপহরণ। মামলা করার পর আসামি জামিনে মুক্ত। কিন্তু ফিরে আসেনি অপহৃত মেয়েটি। প্রায় এক মাস মেয়ের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় কেঁদে চোখ ভাসাচ্ছেন হতভাগ্য বাবা-মা। মেয়েকে খুঁজে পেতে র্যাব-পুলিশের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না। কি বিচিত্র এ দেশ এবং দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকাণ্ড!
এমন ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানার সুলতান বাহাদুর গ্রামে। অপহৃত ১৪ বছর বয়সী কিশোরীর বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার মশিউর রহমান জানান, তার মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুই-তিন বছর আগে স্থানীয় মতিয়ার ড্রাইভারের বখাটে ছেলে মানিক তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে মানিক মেয়েটির স্কুলের যাওয়া-আসার সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে এলাকায় অনেক সালিশ বৈঠক ও বিচার হয়েছে। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি মানিকের অত্যাচার। তার ভয়ে মেয়েটি স্কুলেই যেতে চাইত না। তিনি বলেন, মানিকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বারবার ইভটিজিংয়ের মামলা করতে গিয়েছি। কিন্তু এলাকার মুরব্বিরা বলে ‘গ্রামের ছেলে। মামলা করলে বদনাম হয়ে যাবে। আমরা মীমাংসা করে দিচ্ছি।’ এই বলে তারা মানিক ও তার বাবাকে ডেকে মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবার মিটিং শেষ হলেই মানিকের অত্যাচার আরো বাড়ে। সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর মানিক ওই মেয়েকে তুলে নিতে তাদের বাড়ি যায়। এ সময় বাড়ির লোকজন মানিককে আটক করে তার বাবা ও এলাকার গণ্যমান্যদের খবর দেন। এরপর মানিক, তার বাবা ও মুরব্বিরা এ ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটবে না বলে একটি অঙ্গীকারনামা লিখে তাতে স্বাক্ষর করেন। ঠিক তার পরদিন ছিল এলাকার হাটবার। সন্ধ্যায় এলাকা ছিল প্রায় পুরুষশূন্য। সেই সুযোগে মানিক ও তার পাঁচ বন্ধু তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে মেয়ের বাড়ির সামনে যায়। তারা দ্রুত ঘরে ঢুকে কালো কাপড় দিয়ে মেয়েটির মুখ ঢেকে ফেলে। এ সময় মেয়েটি চিৎকার করতে থাকলে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন তার মা নুরুন্নাহার লতা। তখন মানিক লতাকে মারধর করে ফেলে দেয় এবং মেয়েকে তুলে নেয়। এ ঘটনার পরই রাজারহাট থানায় একটি মামলা করা হয়। এরপর শুরু হয় মামলা তুলে নেয়ার জন্য ফোনে মানিকের হুমকি।
মানিক জানায়, তোর মেয়েকে খুন করে লাশ প্যাকেট করে পাঠিয়ে দেবো। মানিকের এসব কথোপকথন মোবাইলে রেকর্ড করে পুলিশ ও র্যাবের কাছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আসামিদের ধরতে তাদের কোনো লক্ষণ নেই। মশিউর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, মাঝে একবার মানিক ফোন করলে তাকে অনেক অনুরোধ করে মেয়ের সাথে কথা বলতে পেরেছি। তখন মেয়ে চিৎকার দিয়ে শুধু বলছিল আব্বা আমাকে বাঁচান। এরপর থেকে আর কথা হয়নি তার সাথে।
তিনি আরো বলেন, মেয়েকে এখনো ফিরে পাইনি। সে বেঁচে আছে নাকি তাকে খুন করা হয়েছে তাও জানি না। অথচ আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এখন পুরো পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
এমন ঘটনা আমাদের দেশে প্রায়ই ঘটছে অথচ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সবকিছু অবগত হলেও কোন ফল হচ্ছে না। তাছাড়া এলাকার একাধিকবার ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি কিভাবে জামিন লাভ করে তাও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। অপহরণকৃত মেয়েটিকে উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।