দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক ॥ প্রতি সপ্তাহের মতো আজও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন মজার মজার খবর আপনাদের সামনে তুলে ধরবো- আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
চকোলেটের পাহাড়
ফিলিপিনসের বোহোল অঞ্চলে গেলে অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। ছোট ছোট পাহাড়ের ঢিবির সারি। প্রশ্ন হচ্ছে, পাহাড় দেখে অবাক হব কেন? পঞ্চাশ স্কয়ার কিলোমিটার বিস্তৃত এ অঞ্চলে একসঙ্গে ১ হাজার ২৬৮টি একই রকমের, একই আকৃতির পাহাড় দেখা যাবে। তার ওপর তাদের রঙ আবার চকোলেটের মতো। লাইমস্টোনের তৈরি এ পাহাড়গুলোর উচ্চতা ৩০ থেকে ৫০ মিটার। লাইমস্টোনের ওপর পুরু ঘাসের স্তর গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে গেলে বাদামি রঙ হয়ে চকোলেটের মতো হয়ে যায়। তাই এদের নাম চকোলেট পাহাড়।
গুহা নেটওয়ার্ক হ্যাংসন ডুং
আমরা অনেক রহস্যময় গুহা সম্পর্কে জানি। এসব গুহার কোনও কোনওটি খুবই ভয়ংকর। গুহার ভেতরে ঢুকলে মৃত্যু অবধারিত। তবে হ্যাংসন ডুং মানুষ মারা গুহা নয়। তাই বলে তবে এর রহস্যও কিন্তু কম নয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহা নেটওয়ার্কের নাম হ্যাংসন ডুং। ভিয়েতনামের হিন নামমো নামক অঞ্চলে এই গুহা নেটওয়ার্কের অবস্থান। আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে গুহাটি আবিষ্কৃত হয়। ব্রিটিশ গুহা গবেষণা সংগঠনের প্রধান হাওয়ার্ড লিমবিট ১০ এপ্রিল ২০০৯ সালে বিশ্বের বৃহত্তম এই গুহা নেটওয়ার্কের আয়তন মাপতে সক্ষম হন। হ্যাংসন ডুং চওড়ায় ২০০ মিটারের বেশি, ১৫০ মিটারের বেশি এর উচ্চতা ও দৈর্ঘ্য ৬.৫ কিলোমিটার। গুহাটি আবিষ্কারের আগে মালয়েশিয়ার ডির গুহা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহা। ভিয়েতনামের জাতীয় উদ্যান ফুং না কিং ব্যাংয়ের পাশেই হ্যাংসন ডুংয়ের অবস্থান। অতি রহস্যময় গুহাটি প্রায় ১৫০টি গুহার সমন্বয়ে গঠিত। মজার ব্যাপার হল গবেষক দল গুহাটির আয়তন পরিমাপ করতে পারলেও এর শেষ খুঁজে বের করতে পারেননি। ২০০৯ সালে হাওয়ার্ড, রিমটি ফুং না কিং ব্যাং ন্যাশনাল পার্ক থেকে এই গুহা আবিষ্কারের কাজ শুরু করেন। লিমবিট ও তার গবেষণা দল গুহা আবিষ্কারের সময় সম্মুখীন হন নানা বিপদ-আপদের। তারা গুহার মধ্যে পান বিষধর সাপ, বড় মাকড়সা, অদ্ভুত সব প্রাণী ও অজানা-অচেনা বৃক্ষরাজি। তারা গুহার মধ্যে দেখতে পান ছোট ছোট ফোয়ারা। গুহার মধ্যে রয়েছে অনেক সুড়ঙ্গ পথ। যেসব পথ দিয়ে অতি সহজেই ভিয়েতনামের এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যাতায়াত করা যায়। গুহার মধ্যে ফোয়ারা ছাড়াও রয়েছে একাধিক জঙ্গল। দূর থেকে দেখতে হ্যাংসন ডুংকে দোতলা বাসের মতো মনে হয়। যে কারণে হ্যাংসন ডুং অতি আকর্ষণীয় গুহা হিসেবে বিবেচিত।
রহস্যময় রেড উড ফরেস্ট
রহস্যময় পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন রহস্যময় স্থান, গুহা, বাড়ি, দালালকোঠা ও বন। এমনি একটি জায়গার নাম হচ্ছে ‘রেড উড ফরেস্ট’, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিস্ময়কর রেড উড ফরেস্টের আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদ-নদী। নদীগুলোর উৎপত্তি সাগর, মহাসাগর থেকে। বনের পাশেই রয়েছে বিখ্যাত ‘রেড উড ন্যাশনাল পার্ক’, নানা রহস্যে ঘেরা এ বনটি দেখতে অতি চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর। ভ্রমণকারীদের অতি সহজেই এটি আকৃষ্ট করে। বনটি শুধু সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানে রয়েছে বিভিন্ন গাছপালা। বনটিতে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার ফুট উচ্চতার গাছও রয়েছে। এখানে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো গাছ। গাছগুলো দেখতে কোনটি একটু লালচে, সবুজ, বাদামি, আকাশি রঙের। গহিন বনে প্রবেশের জন্য রয়েছে শত শত পথ। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, প্রতিটি পথই যেন লালগালিচা দিয়ে ঢাকা। আসলে পথগুলো লালগালিচা দিয়ে ঢাকা মনে হয় মূলত এ বনের মাটি লাল বর্ণের। দর্শনার্থীরা বনে প্রবেশের আগে ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বন সম্পর্কে তথ্য নিতে পারেন। লাল কাঠের বনের মাঝে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছাউনির ঘর। এসব ঘরে কাঠুরিয়ারা বসবাস করেন। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, বনের ঠিক মাঝখানে রয়েছে হামবোল্ট পয়েন্ট।
আর এ পয়েন্টকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে বয়ে বেড়াচ্ছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কথিত আছে, হামবোল্ট পয়েন্ট থেকে ৫০ গজ দূরে গেলে কোনও মানুষ আর বন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন লোক এ রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেকে মনে করেন, যারা ফিরে আসেনি তারা ছোট ছোট রেড উড ট্রি হয়ে গেছেন। তবে স্থানীয় বন কর্মকর্তারা মনে করেন, হামবোল্ট পয়েন্ট থেকে ৫০ গজ পরেই রয়েছে চোরাবালি। আর এ বালিতে একবার পা পড়লে ফিরে আসা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময়ে লাল কাঠের বনটি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যকে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডোসহ নানা বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে আসছে। রেড উড ফরেস্টের বনের হামবোল্ট পয়েন্ট ছাড়া বনটির বাকি স্থান বেশ নিরাপদ। হাজার বছরের রহস্যময় এ বনে প্রতিবছরই হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভিড় করে।
উড়ন্ত পাখির ওপর তেজী ঘোড়া
‘উড়ন্ত পাখির ওপর তেজী ঘোড়া’ হল এক ধরণের চমৎকার ভাস্কর্যশিল্পকর্ম। এটি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি। এর আরেক নাম ‘ ব্রোঞ্জের ধাবমান ঘোড়া’, এই ভাস্কর্য ৩৪.৫ সেন্টিমিটার উঁচু, ৪৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ১০ সেণ্টিমিটার চওড়া । এটি পূর্ব হান রাজবংশ আমলে ( ২৫-২২০ খ্রিস্টাব্দ) তৈরি। ভাস্কর্যটি উত্তরপশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের উওয়েই নামক স্থানের লেইথাই সমাধি থেকে আবিষ্কৃত হয়। এটি এখন কানসু প্রদেশের জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। তেজী ঘোড়া হল প্রাচীন চীনের যুদ্ধ, পরিবহন আর যোগাযোগের সবচেয়ে দ্রুত আর কার্যকর বাহন বা মাধ্যম। শক্তিশালী অশ্বারোহী ছিল হানাদার হুনো জাতির আক্রমণের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে হান রাজবংশের বাহিনীর বিজয়ের একটি অপরিহার্য শর্ত। অশ্বারোহী বাহিনীর সাহায্যেই কেবল চীনের উত্তরাংশের শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষা করা যায়। তাই হান বংশের লোকেরা আগের যে কোন রাজবংশের চেয়ে ঘোড়াকে বেশি ভালবাসেন এবং তেজস্বী ঘোড়াকে জাতীয় মর্যাদা, শক্তিমত্তা এবং গৌরবময় কীর্তির প্রতীক বলে মনে করেন। তাই প্রচুর তেজস্বী ঘোড়ার মূর্তি দেখা যায় হান বংশের ভাস্কর্য শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত হল এই তেজী ঘোড়া ‘উড়ন্ত পাখির ওপর তেজী ঘোড়া’, এই ধাবমান তেজী ঘোড়াটির ভঙ্গি খুবই সুন্দর। মাথা উঁচু করে তুলে রেখেছে, লেজ নাড়াচ্ছে, মাথা একটু বাম দিকে হেলে আছে, ঘোড়াটির তিন পা উঁচুতে শূন্যে তুলেছে, শুধু ডান দিকের পেছনের পা একটি ডানা মেলা উড়ন্ত পাখি ‘সোয়ালো পাখির’ ওপর রেখেছে। তেজস্বী ঘোড়ার শরীরের তাগড়া বা বলিষ্ঠ গড়ন থেকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার অসীম শক্তি। অথচ তার গতির ভঙ্গি আবার হালকা উড়ন্ত ভঙ্গিমার মতো। ফলে মানুষ ভুলে যায় যে, ঘোড়াটির গোটা শরীরের ওজন ছোট্ট একটি উড়ন্ত সোয়ালো পাখির ওপর ভর করে আছে। ‘উড়ন্ত পাখির ওপর তেজী ঘোড়া’ ভাস্কর্যটি হল হান রাজবংশের শিল্পীদের উচ্চ পর্যায়ের বুদ্ধি, সমৃদ্ধ কাল্পনিক শক্তি, রোমান্টিক মনোভাব এবং কলাকৌশলের উৎকর্ষের সমন্বয়সাধন । এটা চীনের প্রাচীন ভাস্কর্যশিল্পের অমূল্য সম্পদ।
রূপার বাঘ
রূপার বাঘটি খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৫ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২২১ সাল পর্যন্ত ‘যুদ্ধরত রাষ্ট্রসমূহ’ আমলের শেষ সময়পর্বে তৈরি। এটি চীনে শান’সি প্রদেশের শেংমু নামক জায়গা থেকে আবিষ্কৃত হয়।
জলাভূমির বিচিত্র পাখিরা
পানিতে হাঁটা পাখি (Wader) জলাভূমি বা জলাধারের পাখি হিসেবে পরিচিত। এরা Charadriiformes বর্গের অন্তর্গত Charadrii উপ-বর্গের সদস্য। বাংলাদেশে এই উপ-বর্গের অধীনে যেসব সদস্য পাওয়া যায় সেগুলি হচ্ছে পিপি (Jacana), রঙ্গিলা চ্যাগা (Painted snipe), অয়েস্টারভোজী (Oystercatcher), ঢেঙ্গা (Avocet), স্টিল্ট (Stilt), জোয়ালা (Ruff), জোরালি (Godwit), স্টোন কারলিউ (Stone Curlew), িপ্রাটিনকোল (Pratincole), কালশির হট্টিটি (Lapwing), জিরিয়া (Plover), চাপাখি (Sandpiper), কাঁদাখোচা/চেগা (Snipes), স্টিন্টস (Stints), বাঁকা ঠোঁট চাপাখি (Dunlins) এবং বিলাতি চাহা (Woodcock), বেলাভূমির পাখিগুলি মোটামুটিভাবে ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। এদের পা, গলা ও চঞ্চু লম্বা হয়। শুধুমাত্র জিরিয়া, স্টোন কারলিউ এবং কালশির হট্টিটির ঠোঁট অপেক্ষাকৃত ছোট। এদের অধিকাংশের ডানা রেখা (wing bars) স্পষ্ট, প্রজাতি অনুযায়ী ডাক নির্দিষ্ট এবং স্ত্রী-পুরুষ দেখতে প্রায় অভিন্ন। কিন্তু প্রজনন ঋতু অথবা গ্রীষ্মে অনেক প্রজাতির পুরুষের মাথা গ্রীবা এবং মুখে রঙের (Nuptial colour) আভা লক্ষ্য করা যায়। সুমেরু, উত্তর ইউরোপ এবং এশিয়ার তুন্দ া অঞ্চল, জলাভূমিময় পাইন বন এবং তৃণভূমিতে এদের অধিকাংশ গ্রীষ্ম ঋতুতে প্রজনন সম্পন্ন করে। এসব পাখির অধিকাংশ শীতের সময় ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চলে পরিযানে যায়। পরিযানকৃত শীতের এসব পাখি মোহনা, প্লাবনভূমি, বালিয়াড়ি, বেলাভূমি, বিল, বাঁওড়, হাওর, চর, নদীতীর, বড় পুকুর, হ্রদ, জলাধার, সেচ-খাল, বাঁধ প্রভৃতি পছন্দ করে। কিছু শীতের পাখি সেচকৃত ধানক্ষেত বেছে নেয়। বাংলাদেশে প্রায় ৬২৮ প্রজাতির পাখির এক দশমাংশ জলাভূমির পাখি। এদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ স্থানীয়, বাকিরা অতিথি পাখি। বেলাভূমির অধিকাংশই পাখিই অতিথি পাখি। আবার কিছু প্রজাতির পাখি বাংলাদেশের উপর দিয়ে পরিযানের সময় বেলাভূমিকে পথের মাঝখানে বিশ্রামস্থল হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বাংলা রাজ্য-সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু পাখি প্রজনন সম্পন্ন করে। এরা হলো রঙ্গিলা চ্যাগা, লাল লতিকা হট্টিটি, হট্টিটি, বালুচরের টি-টি, শিল বাটান, বড় শিলা বাটান, খরমা, ছোট বাবুই বাটান, বড় বাবুই বাটান, লাল পা ঢেঙ্গা, ঢেঙ্গা, জলময়ুর এবং দল পিপি। জলাভূমিতে সচরাচর দেখতে পাওয়া পরিযানকৃত পাখিগুলি হচ্ছে চাপাখি, কাঁদাখোচা/চেগা, বাটান/জিরিয়া, গুলিন্দা, জোরালি, পিউ এবং গ্রিনস্যাংক।