ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ দেশের সাধারণ মানুষ খুন হলে তার কি হবে সে চিন্তা এখন প্রায় সকলের মনে। কারণ সাংবাদিক দম্পতি খুন হওয়ার পর দেশের সাধারণ মানুষ ভেবেছিল খুনিরা পার পাবে না। কারণ দেশের সাংবাদিক সমাজ এ দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যেভাবে কাজ করেন তাতে সাধারণ জনগণ ভেবেছিল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডটি খুব দ্রুতই সমাধান হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটলো তার উল্টো। দেশের মিডিয়ার এতবড় দু’জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের পর যদি পুলিশ কাওকে গ্রেফতার করতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ খুন হলে তার কি হবে?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ১৫ দিন পেরুলেও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা ভিন্ন ভিন্ন ছকে তদন্ত করলেও এখনও খুনিদের চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করতে পারেননি। বিভিন্ন সময়ে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চলছে যাচাই-বাছাই। চলছে সাগর-রুনীর ফ্ল্যাট থেকে খোয়া যাওয়া মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টা। এদিকে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুর থেকে রক্তমাখা কাপড় উদ্ধারের কথা শোনা গেলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেননি। একই রাতে রাজধানীর অদূরে মুন্সীগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে দুজনকে আটকের ব্যাপারেও মুখ খোলেননি গোয়েন্দারা। সূত্র উল্লেখ করে দৈনিক যুগান্তর বলেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে আটককৃত যুবকের বাড়ি সোনারগাঁয়ের মারুফদী গ্রামে। মূলত তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা একের পর এক অভিযান পরিচালনা করছে। তবে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ডিসি-ডিবি মনিরুল ইসলাম বলেছেন, তদন্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।
এদিকে সাগর সরোয়ারের এনার্জি বাংলা নামে একটি ওয়েবসাইট নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি কে বা কারা সাগর সরোয়ারের ওয়েবসাইটটি থেকে সব তথ্য মুছে ফেলেছে। ওয়েবসাইটটিতে দেশের এনার্জি সংশ্লিষ্ট প্রচুর তথ্য ছিল। হঠাৎই এসব তথ্য গায়েব হয়ে যাওয়ায় সবার মাঝেই কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে। সাগর-রুনীর খুনের সঙ্গে এনার্জি সংশ্লিষ্ট কোন কারণ রয়েছে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান হয়ে পড়ে। কারণ সাগর-রুনী দুজনই এনার্জি বিট কভার করতেন। অন্যদিকে শনিবার ওয়েবসাইটে আবারও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন লেখা আপডেট করা হয়। কে বা কারা এ তথ্য গায়েব করে দিয়েছিল আবার নতুন করে আপডেট করছে তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক যুগান্তর আরও জানায়, প্রথম দিকে অন্যান্য একাধিক মোটিভের সঙ্গে চুরি-ডাকাতির বিষয়টিও তদন্ত করা হয়। তবে উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য না পাওয়ায় মাঝে চুরি-ডাকাতি সংক্রান্ত তদন্ত থমকে যায়। পরে আবারও সাগর-রুনির খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ, নোটবুক, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার উদ্ধারের জন্য ডিবির একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা মোবাইল ও ল্যাপটপের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। খোয়া যাওয়া এসব জিনিসপত্র উদ্ধার করতে পারলে খুনিদের ধরা অনেকটাই সহজ হবে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। নিহত মেহেরুন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ওয়েবসাইট (www.energybangla.com) থেকে সব তথ্য গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিষয়টি র্যাব ও ডিবির কর্মকর্তাদের জানান। এছাড়া পার্বত্য এলাকা নিয়ে সাগরের বই ‘আমি কর্নেলকে দেখেছি’র দ্বিতীয় খণ্ডের পাণ্ডুলিপির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। ওই পাণ্ডুলিপিতে উঠে আসা এমন কোন তথ্য থাকতে পারে যাতে কোন মহল বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তার এই পাণ্ডুলিপি ব্যক্তিগত ল্যাপটপটিতেই ছিল। সেই ল্যাপটপটি ঘটনার রাতে খোয়া গেছে বলে তিনি জানান। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ওয়েবসাইটের বিষয়টি জানার পর এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।