দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসির দাবি এখন জন দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ মঙ্গলবার জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে গণ অসন্তোষ বাড়তে থাকে। শাহবাগ চত্তরের ছোট্ট একটি সমাবেশ আস্তে আস্তে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আর এটি এখন শুধু শাহবাগে সীমাবদ্ধ নেই। এই আন্দোলন এখন দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবারের সেই সামান্য শুরুর থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছে। শাহবাগ চত্তর পরিণত হয়েছে এক গণসমুদ্রে। অরাজনৈতিক সংগঠন এই আন্দোলনের ডাক দিলেও ক্রমেই এটি বিশাল এক গণসমুদ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ এই সমাবেশে যোগ দিয়ে একাত্ততা ঘোষণা করেছেন। এই প্রজন্মের কাছে একটি মহা আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম ১৯৭১ দেখেনি কিন্তু ইতিহাস থেকে যা জেনেছে আজ তার সঠিক মূল্যায়ন তারা করতে চাই। আর তাই সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তির সর্বোচ্চ সাজা না হয়ে কেনো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো সে প্রশ্ন তাদের কাছে দানা বেঁধে উঠেছে। আর তাই তারা দেশের টানে একত্রিত হয়েছেন। সমাবেশে আগতদের সঙ্গে আলাপ করে তাই জানা গেছে। এই প্রজন্মের সকলের এক জবাব, ‘আমরা রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ’ চাই। স্বাধীনতার ৪২ বছর পার হলেও জাতি এই রাজাকারদের হাত থেকে মুক্ত হতে পারেনি। আজ তারা, দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশের আইন ও আদালতকে একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারে না।
সব শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্লোগানে, গানে-কবিতায়-অঙ্কনে প্রকম্পিত হচ্ছে শাহবাগ। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি না দিলে শাহবাগ ছাড়বে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ আন্দোলন লাগাতার চলছে।
‘রাজাকারের ফাঁসি না হলে/ জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে, ুক তে কাদের মোলস্না/তুই রাজাকার, তুই রাজাকার/গ তে গোলাম আযম/তুই রাজাকার, তুই রাজাকার/ম তে মুজাহিদ/তুই রাজাকার, তুই রাজাকার/ন তে নিজামী/তুই রাজাকার, তুই রাজাকার/ রাজাকারের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, শ্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজধানীর শাহবাগ স্কয়ার।
শাহবাগ চত্বরের সিগন্যাল বাতির স্ট্যান্ডে রাজাকারদের কুশপুতুল ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুশপুতুল বানিয়ে রাজাকারদের ঝুঁলিয়ে দেয়। এ ছাড়া কাদের মোলস্নার কুশপুতুল বানিয়ে চত্বরের মাঝখানে রাখা হয়েছে। কুশপুতুলকে ঘিরে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অবস্থান করছে সেখানে। বিক্ষোভে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ছুটে আসছেন শাহবাগে। এ ছাড়া নানা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও সংহতি জানিয়ে অংশ নিচ্ছেন বিক্ষোভে। আজ সকাল ৮টায় সমাবেশ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হলেও সারারাত শাহবাগ চত্তর ছিল লোকে লোকারন্ন। সারারাত ধরে সংগ্রামী গান আবৃত্তি ও বক্তৃতা ও শ্লোগানে মুখর ছিল পুরো চত্তর। আগামীকাল শুক্রবার এখানে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। আর এই মহাসমাবেশ থেকেই পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।