দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাষ্ট্রপক্ষ অথবা সংক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সমান সুযোগের বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর সংশোধন প্রস্তাব ২০১৩ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খবর বাংলাদেশ নিউজ২৪।
আজ সোমবার ১১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইয়া সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৪৫ দিনের মধ্যে শুনানি করে রায় ঘোষণা করবে। তবে উপযুক্ত কারণ থাকলে পরবর্তী ১৫ দিন অর্থাৎ সর্বমোট ৬০ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণা করতে হবে।” মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন করায় সংসদে এ সপ্তাহেই প্রস্তাবিত আইনের সংশোধনী পাস করার সম্ভাবনা রয়েছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর ফাঁসির দাবিতে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড়ে ছাত্র-জনতা সাতদিন ধরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।
বিক্ষোভকারীরা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে কাদের মোলস্নাকে ফাঁসি দেয়ার দাবি জানায়। তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সমান সুযোগ দাবি করেন। তারা ঘোষণা করেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ছাত্র-জনতার দাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।
রোববার আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে তার কক্ষে সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি আবদুর রশিদ, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সমন্বয়কারী এম কে রহমান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ আলম, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, আইন সচিব জহিরুল হক, লেজিসলেটিভ সচিব শহীদুল হকসহ আইন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ২১ ধারার তিনটি উপধারা সংশোধনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক থেকে বের হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে সমতা আনার জন্যই এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সংশোধনীর ব্যাপারে আমাদের মতামত দিয়ে এসেছি।”
তিনি আরো বলেন, “এই সংশোধনীর ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ হবে না বলে মনে হচ্ছে। এ নিয়ে কোনোা বিতর্ক হবে না এটা আশা করছি।”
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “এই সংশোধনীর ব্যাপারে আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতিদের মতামত নিয়েছি। তারা সবাই আপিলে সমান সুযোগের কথা বলেছেন।” তিনি আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। সাজা ও দ-ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে।”
আগে শুধু আসামিপক্ষ আপিল করার সুযোগ ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগ থেকে খালাস পেলে তার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারত। এখন রাষ্ট্রপক্ষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আপিলের সমান সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, “সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্যই এই সংশোধনী আনা হচ্ছে। এই সংশোধনীর ব্যাপারে আশা করি প্রশ্ন উঠবে না। কারণ সংবিধানের ৪৭(ক) অনুচ্ছেদ আইন এই আইনের প্রোটেকশন দেয়া আছে।”
তিনি বলেন, “আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালত বিচার-বিশেস্নষণ করেই আদেশ দেবেন। সর্বোচ্চ আদালতের রায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।”