ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ আমাদের নীতির পরিবর্তন না হলে দেশের কোন দিন উন্নতি হবে না। আমরা ১৯৭১ সালে এদেশকে স্বাধীন করেছিলাম সুখে-শান্তিতে এদেশে আমরা বসবাস করবো। এ দেশ আমাদের দেশ, এদেশের উন্নতির জন্য আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবো। কিন্তু বাস্তবে কি তা আমরা পেরেছি? কর ফাঁকি দেওয়ার মতো গর্হিত কাজ করে যাচ্ছে আজ অনেকে। অথচ এই কর আমাদের জাতীয় উন্নয়নে এক বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে। তারপরও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে কর ফাঁকি দিচ্ছে। কিন্তু এবার ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে বলা যায় শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। কারণ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) দেশীয় আসর হলেও এতে রয়েছে বিদেশী খেলোয়াড়। তাই এর সঙ্গে দেশের ভাবমুর্তি অনেকটা নির্ভর করছে। অথচ সেই বিপিএল আয়োজকরা কর ফাঁকি দিতে চাচ্ছেন!
দৈনিক যুগান্তরের এক খবরে বলা হয়েছে, সরকারের কোষাগারে প্রায় ২৫ কোটি টাকার কর দিতে চাচ্ছে না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট আয়োজকরা। এ নিয়ে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিপিএল স্পন্সরদের ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই মেগা ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বিদেশী খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ (কোচিং স্টাফ) ৭১ জন বিদেশী অংশ নিয়েছে। তাদের পারিশ্রমিক, দল কেনা, প্রচারণা, টিকিট বিক্রিসহ ১২টি খাতে কয়েকশ’ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন হচ্ছে। খাতওয়ারী এই লেনদেনের ওপর আইন অনুযায়ী ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শতাংশ উৎস কর আদায় করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে তা ফাঁকি দিতে একের পর এক কেলেংকারির জন্ম দিচ্ছে আয়োজকরা। কর কর্মকর্তাদেরও তথ্য দিতে বারবার অসহযোগিতা করা হয়। এই অবস্থায় কর প্রদানের প্রমাণপত্র ছাড়া বিদেশীদের বাংলাদেশ ত্যাগের ওপর গত সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এনবিআর। এ নিয়ে সর্বস্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আয়কর বিভাগের সঙ্গে এক বৈঠকে ‘৩০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পূর্ণ কর পরিশোধ করা হবে’- এ মুচলেকা দিতে রাজি হয় বিপিএল আয়োজকরা। এনবিআরের সদস্য এম এ কাদের সরকার তাদের আশ্বস্ত করেন যে, এ মুচলেকা দিলে খেলা শেষে দেশ ত্যাগে কারও সমস্যা হবে না। তবে কর ফাঁকি দেয়ার কোন প্রচেষ্টা গ্রহণযোগ্য হবে না। ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি জানান, আইন অনুযায়ী অবশ্যই যথাযথ কর দিতে হবে। ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কারও নেই।
পত্রিকার খবরে আরও বলা হয়েছে, এদিকে কর ফাঁকি দিতে এবার নতুন কৌশল নিচ্ছে বিপিএল আয়োজকরা (Franchisee)।
বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিবি) সঙ্গে ভারতীয় গেম অন স্পোর্টস মেনেজমেন্টের (জিওএসএম) মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি পরিবর্তন করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। যদিও আয়কর কর্মকর্তারা দৃঢ়তার সঙ্গে তা নাকচ করে দিয়েছেন। কর অব্যহতি সুবিধা থাকায় বিসিসিবি যে কোন খেলা সংক্রান্ত লেনদেন সম্পূর্ণ করমুক্ত। কিন্তু সম্পাদিত চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, টুর্নামেন্ট পরিচালনার সব স্বত্ব জিওএসএম পাবে। বিসিসিবি শুধু জিওএসএম হতে কিছু অর্থ পাবে। ফলে দল ক্রয়, সম্প্রচার স্বত্ব, টিকিট বিক্রির স্বত্বসহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্যে স্পন্সর বা আয়োজকদের চুক্তি করতে হয়েছে ভারতীয় জিওএসএমের সঙ্গে। এতে বিসিসিবির কর অব্যাহতি সুবিধা তাদের উপর প্রযোজ্য থাকে না। বিষয়টি বুঝতে পেরে বিপিএল স্পন্সররা একটি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিসিসিবির সঙ্গে নতুন চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও স্পনসররা বিসিসিবির সঙ্গে সরাসরি নতুন চুক্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে কর কর্মকর্তারা এ ধরনের অপচেষ্টা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, চুক্তি থাকা সত্ত্বেও নতুন করে চুক্তি করার উদ্যোগ হবে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা। এ ধরনের যে কোন অপচেষ্টা আয়কর আইন পরিপন্থী এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। বিপিএল টুর্নামেন্ট থেকে কর আদায়ের জন্যে গঠিত কমিটির সভাপতি কানন কুমার রায় বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সবাই কর দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে নতুন করে চুক্তির কথাও বলা হয়েছে। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, আইন অনুযায়ী তার কোন সুযোগ নেই। আর তাহলে এনবিআরও তা সহজভাবে নেবে না।
এনবিআরের এক আদেশে বিপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের লেনদেন হতে উতসে কর আদায়ের জন্যে কর পরিদর্শন পরিদফতরের মহাপরিচালক কানন কুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ক্রিকেট বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই মেগা টুর্নামেন্টে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক ও দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন জড়িত রয়েছে। এসব লেনদেনের ওপর আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিপুল অংকের উতসে কর আদায়যোগ্য। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি গ্রহণ বিপিএল সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্যই বাধ্যতামূলক। এতে সরকারের কর আদায়ও নিশ্চিত হবে। এদিকে বিপিএল সংশ্লিষ্ট যে কোন লেনদেনের ক্ষেত্রে উতসে আয়কর কর্তন বা সংগ্রহ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা রেমিটেন্সের অনুমতি প্রদান না করার জন্য এনবিআরের পক্ষ হতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিপিএল টি-২০ ক্রিকেট আয়োজনে বরিশাল বার্নার্স (আলিফ গ্রুপ) ১ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার, চট্টগ্রাম কিংস ( এসকিউ স্পোর্টস) ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস (ইউরোপা গ্রুপ) ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার, খুলনা রয়াল বেঙ্গল ( অরিয়ন গ্রুপ) ১ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার, দুরন্ত রাজশাহী (ডিজিটাল অটো কেয়ার) ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার এবং সিলেট রয়্যালস (ওয়ালটন গ্রুপ) ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ৬ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। যা দল কেনার ভারতীয় জিওএসএমকে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাবদ প্রায় ৪৫ লাখ ডলার বা এরচেয়ে বেশি ব্যয় করা হবে। অপরদিকে টিকিট বিক্রি ও অন্যান্য খাতে আরও কয়েকশ’ কোটি টাকার লেনদেন হবে।
জানা গেছে, কানন কুমার কমিটি এরই মধ্যে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত বেশ কিছু চুক্তিপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে। এর ভিত্তিতে কর আদায়ের জন্যে ১২টি খাত চিহ্নিত করে কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ খাতগুলোর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দল কেনার জন্যে স্পন্সর কর্তৃক গেম অন স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বাজিওএসএমকে প্রদত্ত অর্থ, জিওএসএমের স্থানীয় এজেন্ট ইম্পার্টেক্স বিডিকে প্রদত্ত অর্থ, টিকিট বিক্রির স্বত্ত্ব প্রাপ্ত শিহাব ট্রেডিং কর্তৃক প্রদত্ব অর্থ, অনলাইন টিকিট বিক্রির অর্থ, টেলিভিশন সম্প্রচারের দায়িত্ব পালনকারি ভিরগো মিডায়া কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ, দেশী-বিদেশী খেলোয়াড়, কোচ ও সংশ্লিষ্টদের প্রদত্ত অর্থ ইত্যাদি।