দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দিবিনিময় ও সংশোধিত ভিসা ব্যবস্থা বিষয়ে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমপ্রতি রূপসী বাংলা হোটেলে অনুষ্ঠিত দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে এই দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে। এই চুক্তির ফলে উভয় দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন্দিবিনিময় চুক্তি
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতে পালিয়ে থাকা অপরাধীদের হস্তান্তরের লক্ষ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলেও এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের সুযোগ থাকছে না। অর্থাৎ রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া অপরাধীদের হস্তান্তরের সুযোগ থাকছে না। এই চুক্তি অনুযায়ী চার ধরনের অপরাধীকে হস্তান্তর করা যাবে। এর মধ্যে পালিয়ে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামি, অভিযোগ রয়েছে এমন আসামি, মোস্টওয়ান্টেড আসামি ও বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে এ ধরনের আসামিকে এক দেশ চাইলে অপর দেশ তাদের ফেরত পাঠাতে পারবে। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতে পালিয়ে থাকা বা জেলে আটক বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিসহ প্রায় দুই হাজারের বেশি অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে। এর মধ্যে রয়েছে মোস্টওয়ান্টেড অপরাধী। অন্যদিকে বাংলাদেশে পালিয়ে থাকা দুই শতাধিক ভারতীয় অপরাধীকে ফেরত পাবে দেশটি। তবে বিষয়টি অবশ্য উভয়দেশের মধ্যে আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে।
ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংশোধিত ভিসা ব্যবস্থা
বৈঠকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংশোধিত ভিসা ব্যবস্থা বিষয়ক (রিভাইজড ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট বা আরটিএ) দলিল সই হয়। এতে পর্যটক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ দুই দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মাল্টিপল ভিসা চালুসহ বিদ্যমান ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ হবে। এতে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টের জন্য ভারতীয় ভিসা নিতে হবে না। স্বল্পমেয়াদি ভিসা তিন মাসের জন্য এবং দীর্ঘমেয়াদি ভিসা এক বছরের জন্য করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি মাল্টিপল ভিসায় একবারে সর্বোচ্চ তিন মাস ভারতে কাটানো যাবে। রোগীদের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। একজন রোগীর সঙ্গে তিনজন সহকারী যেতে পারবেন। বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের এক বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত মাল্টিপল ভিসা দেয়া হবে। সাংবাদিকদের জন্য তিন মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি অথবা এক বছরের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পুরো সেশনের মাল্টিপল ভিসা দেয়া হবে। ট্রানজিট ভিসার জন্য সর্বোচ্চ ৫ দিন ভারতে অবস্থান করতে পারবে। তবে বিমানের যাত্রীদের জন্য কোন ট্রানজিট ভিসা লাগবে না। বাংলাদেশী নাগরিকরা যেকোন রুটে ভারতে ঢুকতে এবং বের হতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে ভারত।
এদিকে ব্যবসায়ীরা মনে করেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেহেতু সুসম্পর্ক রয়েছে। সেহেতু বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের এক বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত মাল্টিপল ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা খুশি। তারা মনে করেন এক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়ীক লেন-দেন বাড়বে এতে উভয় দেশ উপকৃত হবে।
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও সুশীল কুমার সিন্ধে বৈঠকে বসেন। তাদের মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক চলে। এতে ভারতের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সুশীল কুমার সিন্ধে। বাংলাদেশের পক্ষে ১৭ সদস্যের নেতৃত্ব দেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। রূপসী বাংলা হোটেলে সুশীল কুমার সিন্ধের সম্মানে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সফরকালে সুশীল কুমার সিন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।