দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজনে জামাইবাবুকে বরণ করলেন নড়াইলবাসী। নড়াইলের জামাই বাবু ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি সস্ত্রীক আসছেন এতে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না নড়াইলবাসীর কাছে। গতকাল ৫ মার্চ সকালে প্রথমবারের মত নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে শ্বশুরের আদি বাড়িতে আসেন ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও তার স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি।
প্রণব মুখার্জিকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে নড়াইল সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. কবিরুল হক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস কে আবু বাকের, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা রহমান, অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি, জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল হক, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ূন কবীরসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ১১টা ০৫ মিনিটে প্রণব মুখার্জি স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জিসহ সফরসঙ্গীদের নিয়ে ভদ্রবিলা গ্রামে যান। সেখানে তিনি ও তার স্ত্রী পারিবারিক মন্দিরে পূজা-অর্চনা করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। শ্বশুর বাড়িতে স্বজনরা বিভিন্ন প্রকারের খাবারের আয়োজন করলেও তিনি শুধু ডাবের পানি ও কুল বরই দিয়ে নাস্তা সারেন।
শুভ্রা ঘোষ ভদ্রবিলা গ্রামের স্বর্গীয় অমরেন্দ্র ঘোষের মেয়ে। বিয়ের পর হন শুভ্রা মুখার্জি। তার ভাই-বোনদের মধ্যে শুধু কানাইলাল ঘোষ (৬৮) বতর্মানে ভদ্রবিলায় বসবাস করেন।
প্রণব মুখার্জির শ্যালক কানাইলাল ঘোষ জানান, দাদা বাবু আমার ও পরিবারের সদস্যদের পাঞ্জাবি, শাড়ি, ধুতি উপহার দিয়েছেন। আমিও দাদা বাবু ও দিদিকে পাঞ্জাবি, ধুতি, শাড়ি উপহার দিয়েছি। এ গ্রামে একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য দাদা বাবুকে অনুরোধ করেছি।
তিনি আরো জানান, ১৯৪৩ সালে নড়াইল সদরের চাঁচড়া গ্রামের নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শুভ্রা ঘোষ। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কাটান নিজ গ্রাম ভদ্রবিলায়। এরপর তিনি আবার নানা বাড়ি বসবাস শুরু করেন এবং স্থানীয় চাঁচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভারতে চলে যান। ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ওই সময় তারা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তাদের দুই ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি ও সুরজিৎ মুখার্জি এবং এক মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি। তিনি বলেন, দিদি সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে বাড়িতে (ভদ্রবিলা) এসেছিলেন। সে সময় মেয়ে শর্মিষ্ঠাকেও সঙ্গে এনেছিলেন। জামাই বাবুর আসার কথা থাকলেও হঠাৎ তার সফর বাতিল হয়।
প্রণব মুখার্জির আগমন উপলক্ষে শুধু ভদ্রবিলা গ্রাম নয়, যেন পুরো নড়াইল সাজে নতুন সাজে। নড়াইল-যশোর সড়কের চাঁচড়া থেকে শুরু করে রূপগঞ্জ, ভদ্রবিলাসহ প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে নড়াইল-যশোর-লোহাগড়া সড়কের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন খুপরিঘর, দোকান, গাছের গুঁড়ি অপসারণ করা হয়। নড়াইল থেকে ভদ্রবিলা গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের গাছগুলো কেটেছেঁটে গাছের গোড়ায় সাদা ও লাল রং দিয়ে এবং রং-বেরংয়ের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নড়াইলকে ঢেকে দেয়া হয় নিরাপত্তার চাদরে।
Bengali 
English