দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবাক হলেও করার কিছু নেই। কারণ ঘটনাটি সত্যি। স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ, অথচ তার জনসংখ্যা মাত্র ৩ জন। এই দেশটির নাম প্রিন্সিপালিটি অব সিল্যান্ড।
একটি দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৩ জন এমন খবরে যে কেও আশ্চর্য হতে পারেন। তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ সত্যিই প্রিন্সিপালিটি অব সিল্যান্ড নামে এই দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৩ জনি। বিশ্বের বুকে এমনই একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশই শুধু তাই নয়, দেশটির নিজস্ব পতাকা, পাসপোর্ট এমনকি মুদ্রাও রয়েছে।
প্রিন্সিপালিটি অব সিল্যান্ড নামে এই দেশটিই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ। সংক্ষেপে এটিকে সিল্যান্ড বলা হয়ে থাকে। ক্ষুদ্রতম এই দেশটির মোট আয়তন মাত্র ৫৫০ স্কয়ার মিটার। ইংল্যান্ডের উত্তর সাগরে এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির অবস্থান। ক্ষুদ্র হলেও দেশটির একটি রাজধানীও রয়েছে। দেশটির রাজধানীর নাম এইচএম ফোর্ট রুঘশ (HM Fort Roughs)। দেশটির ভাষা ইংরেজি ও মুদ্রার নাম সিল্যানন্ড ডলার। তবে বাইরের কোনো দেশেই এই মুদ্রা চলে না।
প্রকৃতপক্ষে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি সমুদ্র বন্দর ছিল এটি। জার্মান সৈন্যরা যে কোনো সময় ইংল্যান্ড আক্রমণ করতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ইংল্যান্ডের উপকূলভাগে সমুদ্র দুর্গ বানানোর পরিকল্পনা করেছিল। সে পরিকল্পনা থেকেই উপকূল থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে বানানো হয় মউনশেল সি ফোর্ট। এখান থেকেই মূলত শত্রু যুদ্ধ জাহাজগুলোর ওপর নজরদারি হতো। প্রয়োজনে শত্রু জাহাজে আক্রমণ পরিচালনার কাজও চলানো হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে অন্যান্য অসংখ্য দুর্গের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এটাকেও পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল।
এরপর ১৯৬৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ নাগরিক Major Paddz Roy Bates ও তার পরিবার এই জায়গাটির স্বত্বাধিকারী হন। তারপর তারা এটাকে একটি স্বাধীন মাইক্রো রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। পৃথিবীর কোনো দেশ এখনও সিল্যান্ডকে স্বীকৃতি না দিলেও কেও তাদের বিরোধিতাও করেনি। মোট জনসংখ্যার তিনজনই Bates পরিবারের সদস্য। তারাই যথাক্রমে এই রাজ্যের রাজা, রাণী এবং রাজপুত্র।
অদ্ভুত এই দেশটি কিন্তু সাগরের উপর ভাসমান। তাও আবার সরাসরি সাগরের বুকে নয়। মাটি হতে বেশ অনেকটা উপরে দুটো বড় বড় স্টিলের পাইপের উপর এই দেশটির অবস্থান। প্রকৃতপক্ষে এই দেশটিতে কোনো মাটি নেই। পুরোটাই স্টিলে উপর এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটি। এই দেশটিতে যাওয়ার জন্য ইংল্যান্ডের উত্তর উপকূল হতে ১০ কিলোমিটার সাগরের গভীরে যেতে হবে। এখানে গেলে একটিমাত্র ঘর চোখে পড়বে। আর সেটিই হলো এই দেশের রাজপ্রাসাদ। রাজপ্রাসাদের উপর দেশটির পতাকা পতপত করে উড়ছে। কি অদ্ভুত এক ক্ষুদ্র দেশ!
২০০৬ সালের ২৩ জুন এই সিল্যান্ডে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে একবার অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। অগ্নিকাণ্ডে সিল্যান্ডের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়। খবর পেয়ে ইংল্যান্ডের উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার এসে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সিল্যান্ডকে মেরামত করা হয় এবং ২০০৬ সালের নভেম্বরে আবার রাজা, রাণী ও রাজপুত্র নিজ দেশ সিল্যান্ডে ফিরে যান।