স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে: আইন কি বলে

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশে এমনটি প্রায়ই ঘটে থাকে। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা। স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে আইনে আসলে কি আছে। সে সম্পর্কে আমাদের কোনই ধারণা নেই। আজ সে বিষয়েই আলোচনা করা হবে।

বর্তমান স্ত্রী জীবিত থাকতে আরেকটি বা একাধিক বিয়ে করাকে বহুবিবাহ বলা হয়। আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী জীবিত অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। তবে কোনো ব্যক্তির যদি এক স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন পড়ে (যেমন- সন্তান না হওয়া বা অসুস্থ্যতা ইত্যাদি), তাহলে তাকে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে শেষ স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আগে আবেদন করতে হবে।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ ধারার ৬ মতে: দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছ হতে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ফি দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যেসব বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো:

Related Post

(১) বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব
(২) শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা
(৩) দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা
(৪) দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত হতে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন
(৫) মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি।

স্ত্রীর অধিকার লঙ্ঘনে আইনি প্রতিকার কি:

কোনো পুরুষ যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে
তিনি অবিলম্বে বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন।
এক্ষেত্রে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীরা আদালতে মামলা করে বিয়ে বিচ্ছেদ করতে পারেন।
দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে আবার প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণ-পোষণ পাবেন।
প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে পিতা আইনত বাধ্য থাকবেন।
ভরণ-পোষণের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন।
মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করার বিধান রয়েছে।
এছাড়াও অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড হবে।

অপরদিকে দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪ বিধান মতে,
স্বামী-স্ত্রী থাকাবস্থায় পুনরায় বিয়ে করেন তবে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ড
যার মেয়াদ ৭ বছর পর্যন্ত হতে পারে তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
তবে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা উচিত,
বহু বিয়ের মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে,
দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।

বহু বিয়ের আইনগত দিক কি:

# মুসলিম পাবিরারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী পূর্বাহ্নে সালিসি পরিষদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি না নিয়ে কোনো পুরুষ একটি বিয়ে বলবৎ থাকাকালে আর একটি বিয়ে করতে পারবেন না। পূর্বানুমতি গ্রহণ না করে এই জাতীয় কোনো বিয়ে হলে তা মুসলিম বিয়ে এবং তালাক (রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ সালের ৫২নং আইন মোতাবেক রেজিস্ট্রি হবে না)।

# বিয়ের অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রে প্রস্তাবিত বিয়ের কারণ ও বর্তমানে স্ত্রী বা স্ত্রীদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কি না তা উল্লেখ করতে হবে।

# আবেদনপত্র পাঠানোর পর চেয়ারম্যান আবেদনকারী এবং তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলবেন। সালিসি পরিষদ যদি মনে করে যে, প্রস্তাবিত বিয়েটি প্রয়োজন এবং ন্যায়সঙ্গত তাহলে কোনো শর্ত থাকলে সে সাপেক্ষে প্রার্থীর বিয়ের অনুমতি মঞ্জুর করতে পারে।

# আবেদনপত্র সম্পর্কে সিদ্ধান্তকালে সালিসি পরিষদ এই সিদ্ধান্তের কারণসমূহ লিপিবদ্ধ করবে এবং কোনো পক্ষ নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সহকারী জজের পুনর্বিচারের জন্য আবেদন করতে পারবে। এতে সহকারী জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে ও এর বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

# বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের প্রাপ্য মুয়াজ্জল অথবা দেনমোহরের টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবে। সে টাকা ওভাবে পরিশোধ করা না হয়, তাহলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব রূপে আদায় করা হবে।

বহু বিয়ের ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যানের দায়-দায়িত্ব কি:

# বহু বিয়ের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান স্বামীকে অনুমতি দিতেও পারেন, আবার নাও দিতে পারেন।

# যদি কোনো স্বামী সালিসি পরিষদের মাধ্যমে অনুমতি পেয়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান তাকে স্মারক নং সহ দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি প্রদান করবেন।

# অনুমতি ব্যতীত কোনো স্বামী বহু বিয়ে করলে চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্তমান স্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন।

# সালিসি পরিষদের অনুমতি ব্যতীত কোনো ব্যক্তি যদি অন্য একটি বিয়ে করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।

বহু বিয়ের ক্ষেত্রে কাজীর দায়-দায়িত্ব কি:

# বিয়েটি বরের বহু বিয়ে কি না তা কাজী যাচাই করবে।

# সালিসি পরিষদের লিখিত অনুমতি আছে কি না তা দেখবে কাজী।

# সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাজী যেকোনো পন্থা অবলম্বন করতে পারেন, আবার যদি সন্দেহ হয় তাহলে বিয়েটি নাও রেজিস্ট্রি করতে পারেন।
তথ্যসূত্র: বিডিলাইভ২৪

This post was last modified on ডিসেম্বর ১২, ২০১৪ 10:12 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে- মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ “কৃষি-উদ্যোক্তাদের সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি সরকার তাদের বিকাশে সকল…

% দিন আগে

বিস্ময়কর এক রোবট অ্যাটলাসের গল্প

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের চেয়ে ভালোভাবে তো একটি রোবট শরীরকে কখনই নিয়ন্ত্রণ করতে…

% দিন আগে

প্রথম পারিশ্রমিক ছিলো ৫০ রুপি: বর্তমানে প্রতি ছবিতে নেন ২০ কোটি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে দক্ষিণী চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা যশ। যিনি সবার…

% দিন আগে

গাজার যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনছে না ইসরায়েল!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি চুক্তি করতে…

% দিন আগে

ভারতে গাধার দুধ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা লিটার!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের সমাজে গাধা নামক প্রাণীটি কঠোর পরিশ্রমের রূপক হিসেবে প্রচলিত।…

% দিন আগে

চট্টগ্রামের একটি নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ৫ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২২ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে