দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মৃত্যু মানুষের একটি অবধারিত সত্য। এই মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আলোচনা শোনা যায়। এবার শোনা গেলো একটু ব্যতিক্রমি কথা। মৃত্যুর পর দেহে কি কি ঘটতে পারে সে বিষয়ে জানার জন্যই আজকের এই প্রতিবেদন।
আমরা জানি মৃত্যুর পর মৃতদেহে ধীরে ধীরে পচন ধরতে শুরু করে। কিন্তু মৃত্যুর পর হতে পচন ধরার পূর্ব পর্যন্ত শারীরিক কী কী পরিবর্তন হয় অথবা কোন প্রক্রিয়ায় মৃতদেহে পচন শুরু হয়, তা কিন্তু আমাদের জানা নেই।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, ‘মৃত ঘোষণার অর্থ এই নয় যে, দেহের প্রতিটি কোষের মৃত্যু হয়েছে। হৃদযন্ত্র শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া বন্ধ করলে, কোষগুলো অক্সিজেন পায় না। আর তখন অক্সিজেন পাওয়া বন্ধ হলে, পেশিগুলো শিথিল হতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে অন্ত্র ও মূত্রথলিও খালি হতে শুরু হয়।’
গবেষকরা বলেন, ‘কার্যত দেহের মৃত্যু ঘটলেও, অন্ত্র, ত্বক অথবা অন্য কোনো অংশে বসবাসকারী ১শ’ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া তখনও জীবিত থাকে। মৃত্যুর পর দেহের অভ্যন্তরে যা কিছু ঘটে থাকে, সেসব কিছুর পেছনে কাজ করে থাকে এই ১শ’ ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া।
আমরা একটি বিষয় পুরোপুরিভাবে জ্ঞাত নয় তা হলো, মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম দেহের কোন পরিবর্তন আসে সে বিষয়ে। প্রথমেই যেটি হয় তা হলো, অ্যালগর মরটিস (অর্থাৎ মৃতদেহের তাপমাত্রা) ঘরের তাপমাত্রায় না আসা পর্যন্ত দেহের তাপমাত্রা কমতে থাকে প্রতি ঘণ্টায় ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট করে।
গবেষণা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, লিভোর মরটিস বা লিভিডিটি এক্ষেত্রে দেহের নিচের দিকে রক্ত এবং তরল পদার্থ জমা করে থাকে। আর তাই মৃতদেহের ত্বকের প্রকৃত রঙ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। এক সময় এটি গাঢ় বেগুনি-নীল রঙ ধারণ করে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রিগর মরটিস- এ ক্ষেত্রে দেহ হতে অত্যধিক ক্যালসিয়াম ক্ষরণের কারণে পেশিগুলো ক্রমেই শক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থা থাকে ২৪ হতে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। এই সময় অবশ্য অনেকের চোখ খোলা থাকে।
গবেষণা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এরপর দেহে পচন ধরতে শুরু করে। রক্ত চলাচল বন্ধ হলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের গঠন শুরু হয়। আর তাই অম্লের মাত্রা বাড়তে থাকে। যে কারণে মৃতদেহের কোষগুলোতে ভাঙন ধরে। ২ হতে ৩ দিনে দেহ পচতে শুরু করে। পরিপাক নালীতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও আণুবীক্ষণিক প্রাণীরা দেহের অন্যান্য অংশে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে। মৃতদেহের এসময় তলপেট সবুজ বর্ণ ধারণ করে ও তাতে গ্যাস তৈরি হয়। এর চাপে শরীরের মলমূত্র নিষ্কাশিত হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পিউট্রেসিন ও ক্যাডাভেরিনের মতো জৈবিক যৌগ শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়লে, মৃতদেহে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এই গন্ধই হলো মৃতদেহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এরপর নেক্রোসিস পদ্ধতিতে দেহের রঙ সবদিক হতে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। মৃতদেহের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ার কারণে এতে আকৃষ্ট হয়ে ভিড় জমায় উচ্ছিষ্ট-ভোগী নানা পোকা-মাকড়। মৃতদেহকে খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহার করে এসব পোকা-মাকড়গুলো। তারপর ধীরে ধীরে প্রাণহীন মৃতদেহ ক্রমেই মাংস-চামড়ার খোলস ত্যাগ করে পরিণত হতে থাকে হাড় সর্বস্ব কঙ্কালে। এভাবেই এক পরিণতির দিকে ধাবিত হয় মৃতদেহ। যার সবটা আমাদের হিসেবের বাইরে। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস।