দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমানে নারীরা দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। এবার বাংলাদেশের সফল দুই সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে এগিয়ে গেলেন নাঈমা-তামান্না।
বিশ্বজুড়ে নারীদের অগ্রগতির মতো বাংলাদেশও থেমে নেই। বাংলাদেশের নারীরাও এগিয়ে চলেছেন সকল ক্ষেত্রে। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই নারীরা আজ এগিয়ে। এবার প্রথমবারের মতো দেশের সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে সফলভাবে একা আকাশে উড়েছেন দুই নারী। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক এবং ফ্লাইট অফিসার তামান্না-ই-লুতফী।
জানা গেছে, এই দুই সামরিক নারী বৈমানিক ১৭ ডিসেম্বর সফলভাবে বেল-২০৬ মডেলের দুটি হেলিকপ্টার আকাশে উড়ান। তাঁরা সফলভাবে ১৫ মিনিট আকাশে উড়ার পর আবার মাটিতে নেমে আসেন। এরও আগে ২১ নভেম্বর প্রথমবারের মতো সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে আকাশে উড়ে সফল হন তামান্না-ই-লুতফী। তথ্য: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
জানা যায়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী নাঈমা হক। ২০১১ ডিসেম্বরে কমিশন পাওয়ার পর তিনি যোগ দেন বিমান বাহিনীর অপারেশনাল শাখায়। বর্তমানে একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে তিনি কর্মরত।
অপরদিকে বিএএফ শা্হীন স্কুল ও কলেজের ছাত্রী ছিলেন তামান্না-ই-লুতফী। তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন ২০১১ সালে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কমিশন পান। কমিশন পাওয়ার পর তিনিও অপারেশনাল শাখায় যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ফ্লায়িং অফিসার হিসেবে কর্মরত।
সংবাদ মাধ্যমকে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বিমান বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরও বৈমানিক হওয়ার সুযোগ তাঁরা পাবেন এমটি কখনও ভাবেননি দু’জনই। এবছর তারা বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। এখন ওই স্কোয়াড্রনের অধীনে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিয়োজিত আছেন এই সফল দুই নারী সামরিক বৈমানিক।
সংবাদ মাধ্যম সুত্রে বলা হয়, এ বছর ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নম্বর স্কোয়াড্রনে প্রথমবারের মতো নাইমা হক ও তামান্না-ই-লুৎফি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
কৃষি বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা এম নাজমুল হক ও গৃহিনী নাসরিন বেগমের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নাঈমা হক। ব্রিটিশ শাসনামলে দাদা ছিলেন রয়েল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের একজন সদস্য। আর তাঁকে দেখেই স্বপ্নের শুরু এই বৈমানিকের।
অপরদিকে তামান্না-ই-লুতফীর বাবা নিজেই বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় কর্মরত। ছোটবেলা হতেই তাই বিমান বাহিনীর মধ্যেই বড় হয়েছেন তামান্না। যে কারণে খুব ছোট থেকেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে তামান্নার। মূলত বাবার উৎসাহে উৎসাহিত হয়েই তামান্না বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।
দুজনই সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন, ‘নিজেদের এ সাফল্যের পথে বাবা-মা হতে শুরু করে বিমান বাহিনীতে তার প্রশিক্ষক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহকর্মী সবারই সহযোগিতা পেয়েছেন সব সময়। আর তাই সবার প্রতিই তাঁরা দু’জনই কৃতজ্ঞ।
পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংবাদ মাধ্যমকে নাঈমা হক বলেছেন, প্রথমত এই প্রশিক্ষণ শেষ করাই প্রধান কাজ। তারপর দেশের প্রয়োজনে যেখানে দরকার, যেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাকে পাঠানো হবে, সেখানেই কাজ করবেন তিনি।
অপরদিকে তামান্না সংবাদ মাধ্যমকে তাঁর ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের একজন হয়ে বিমান চালানোর ইচ্ছা রয়েছে আমার।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নারী বৈমানিক ইতিপূর্বেও বেসামরিক বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। কিন্তু ১৯৮৪ সালে ঢাকায় একটি ফকার বিমান অবতরণ করাতে যেয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাইলট কানিজ ফাতেমা রোকসানাসহ ওই বিমানের ৪৫ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু।