দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে শনিবারের ভূমিকম্প। এখন এক বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে নেপাল।
নেপাল একটি সুন্দর শহর। পর্যটকদের একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো এই নেপাল। কিন্তু শনিবারের ভূমিকম্প সেই সুন্দর নগরীটিকে আজ পরিণত করেছে এক বিধ্বস্ত নগরীতে। শহরটির দিকে তাকালে এখন দেখা যাবে এক আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে শুধু লাশের গন্ধ। যেখানে একদিন মানুষ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আসতেন- সেই নগরী আজ এক মৃত্যুপুরি।
শনিবারের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৯। প্রলয়ঙ্করী ওই ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালে ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ভূমিকম্পে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষ। প্রতি মুহূর্তে যেনো সেখানে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। কেওই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, আর কতো লাশ পাওয়া যাবে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
ইতিহাসের এক অন্যতম ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয়ে বিশ্বের বহু রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো নেপালকে উদ্ধার তৎপরতা, ত্রাণ সরবরাহ ও পুনর্বাসনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যেই ত্রাণ সামগ্রী ও চিকিৎসা সেবা সামগ্রীসহ স্বেচ্ছাসেবী পাঠিয়েছে।
শনিবারের ভূমিকম্পে মাউন্ট এভারেস্টে ভূমিকম্পে সৃষ্ট ব্যাপক তুষারধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৭ জন। তুষারধসে এতো পর্বতারোহী নিহতের ঘটনা এটিই প্রথম। উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেওয়া প্রশিক্ষিত ব্যক্তি এবং স্বেচ্ছাসেবীরা নিহত ও ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে বিরামহীন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
একমাত্র রাজধানী কাঠমান্ডুতেই নিহত হয়েছেন প্রায় ৮শ’ মানুষ। প্রাচীনতম শহরের বেশ কিছু স্থানে বুলডোজার বা উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত অন্যান্য ভারি যন্ত্রপাতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে হাতের কাছে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়েই বিধস্ত ভবনে সুড়ঙ্গ তৈরি করে উদ্ধার করে আনা হচ্ছে হতাহতদের।
শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ও পোখারা শহরের মধ্যবর্তী স্থানে। প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর পূনরায় ৬ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।
হাজার হাজার মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে নেপালে। স্বজন-হারানোদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে যেনো নেপালের আকাশ-বাতাস। ওই দিনের ভূমিকম্পটি নেপাল ছাড়িয়ে জোরালোভাবে অনুভূত হয় ভারত বাংলাদেশ এবং চীনের তিব্বত অঞ্চলে। ভারতে ৫৪ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে ৩ জন নিহত ও অন্তত ৫শ’ আহত হয়েছেন। স্বল্প জনবসতিপূর্ণ দেশটিতে ১৯৩৪ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৮,৫০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এতোবছর পর নেপালে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প।