দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বের বহুল আলোচিত কিশোরে পরিণত হয়েছে আমেরিকার টেক্সাসের কিশোর আহমেদ। রাতারাতি পাল্টে গেলো ওই কিশোরের জীবনের ধারা।
মাত্র একটি দিনের ঘটনাবলি আমূল পরিবর্তন এনে দিলো টেক্সাসের ১৪ বছরের কিশোর আহমেদের জীবন। মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে কিশোর আহমেদের জীবনে ঘটে গেলো উত্থান-পতন!
মাত্র ১৪ বছর বয়সের কিশোর আহমেদ নতুন একটি ডিজিটাল ঘড়ি বানালো। ঘড়িটি স্কুলের এক শিক্ষিকাকে দেখাতে নিয়ে এলো। কিন্তু শিক্ষকরা তার উদ্ভাবনকে স্বাভাবিকভাবে নিলো না। এর কারণ একটিই তার নাম আহমেদ, অর্থাৎ সে মুসলমান। তাই তার এই কাজটিকেও দেখা হলো সন্দেহের চোখে। ডিজিটাল ওই ঘড়িটিকে ‘বোমা’ বলে সন্দেহ করা হলো। পুলিশে খবর দেওয়া হলো। গ্রেফতার হলো কিশোর আহমেদ। তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করা হলো।
বিষয়টি জানাজানির পর ঘটলো উল্টো ঘটনাও। আহমেদের এই হেনস্থার প্রতিবাদে সরব হলেন প্রাক্তন মার্কিন ‘ফার্স্ট লেডি’ হিলারি ক্লিন্টন। সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার বানানো ঘড়িটি দেখার জন্য আহমেদকে হোয়াইট হাউসে আসার আমন্ত্রণ জানালেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টুইটারে টুইটের মাধ্যমে। আহমেদের সমর্থনে এগিয়ে এলেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। আহমেদের সঙ্গে ফেসবুকে কথাও বলতে চাইলেন ফেসবুকের কর্ণধার জুকারবার্গ। তিনি এমন উদ্ভাবনের জন্য শুধু ধন্যবাদ নয়, তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিলেন।
এসব ঘটনাগুলো মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পাল্টে দিলো কিশোর আহমেদের জীবন ধারা। বিশ্বের টপ আলোচিত কিশোরে পরিণত হলো আহমেদ। জঙ্গী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্ব দরবারে যে নানা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন মুসলমানরা এটিও তার একটি। ইসলাম কখনও মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন সমর্থন করে না। কিন্তু কতিপয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠি এই ধারণাটিকে পাল্টে দিয়েছে। এখন ইসলাম বলতে অন্যধর্মাবলম্বিরা বোঝেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকেই। যার শিকার হয়েছিলেন আহমেদ নামে এই কিশোর। তবে ওই কিশোরের ঘটনাটি নতুন করে ইসলাম ধর্মের মূল নীতিগুলো সামনে উঠে আসছে। ইসলাম কখনও কোনো অন্যায়-অত্যাচারকে সমর্থন করে না, সেটি আবার উঠে এসেছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। কতিপয় জঙ্গী বা সন্ত্রাসীদের কাছে ইসলাম কখনও জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।
ভুল বোঝার ‘খেসারত’ই দিতে হয়েছে আহমেদকে। তাই এ দিন সাংবাদিকদের কাছে তার প্রথম প্রতিক্রিয়াটা ছিল ঠিক এমন, ‘আমরা যেনো ভুল বোঝার বদভ্যাসটা ছাড়তে পারি! আমার বানানো ডিজিটাল ঘড়িটা স্কুলের ম্যাডামকে দেখাতে গিয়েছিলাম। উনি ওটাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। হয়তো ওটাকে বোমা ভেবেছিলেন!’
টেক্সাসের ১৪ বছরের কিশোরটির জীবনে যে ঝড় বয়ে যায়, সেটা তার লাগলো কেমন? এই প্রশ্নের পর আহমেদের চটজলদি জবাব, ‘আমার খুবই খারাপ লেগেছে। শিক্ষক কেনো যে আমাকে ভুল বুঝলেন, কে জানে! এখন এই স্কুলে আমার আর থাকার ইচ্ছা নেই।’
নতুন নতুন যন্ত্র বানাতে তার খুব ভালো লাগে, সে কথা স্পষ্টই বলেছে ১৪ বছর বয়সের এই কিশোর আহমেদ। সে বলেছে, ‘এমন আরও অনেক নতুন যন্ত্র বানাতে চাই আমি। চাই আমার মতো আরও অনেক কিশোরের প্রতিভার স্ফুরণ হোক। পড়তে যেতে চাই এমআইটিতে (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি)। নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে গিয়ে যদি আমার মতো কেও বিপদে পড়ে, তাহলে আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’