স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রধান হতে আগ্রহী নন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রধান বা ওই রকমের বড় কোন দায়িত্ব নেয়ার কথা চিন্তা করিনি। বিশ্বব্যাংকের প্রধান পদের জন্য নাম প্রস্তাব করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ওই পদের চেয়ে গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসা নিয়েই তিনি আগ্রহী। এখন থেকে তার এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি প্রধানমন্ত্রীর ‘সর্বশেষ অবস্থানের’ সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ক্ষুদ্রঋণদাতা এই ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইউনূস।
২ মার্চ সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইউনূস প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘প্রস্তাবটি আমার জন্য ছিল একটি অপ্রত্যাশিত সুসংবাদ’। ড. ইউনূস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, বিশ্বের অন্যতম সুপরিচিত এবং প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে আমার নাম প্রস্তাব করার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সহূদয়তার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ড. ইউনূস পাশাপাশি তার সম্পর্কে যোগ্যতার উদার তালিকা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে এটাই পরিষ্কার হয়ে গেল- আমার এবং গ্রামীণ ব্যাংক সম্বন্ধে তার যে এতদিন ধারণাগুলো ছিল সেগুলোর অবসান হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আশান্বিত হয়েছি এখন থেকে আমার প্রতি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। আমার ও আমার মতো অনেক দেশবাসীর মাথার ওপর থেকে দুঃখ ও দুশ্চিন্তার বিরাট একটা বোঝা নেমে যাবে। ড. ইউনূস বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রধান বা ওই রকমের বড় কোনো দায়িত্ব নেয়ার কথা তিনি কখনও চিন্তা করেননি। কেননা, তিনি বরাবরই বিশ্বব্যাংকের একজন নিয়মিত সমালোচক। তার নিজের কাজের বাইরে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের সর্বোচ্চ দায়িত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারে তার মনে কোন আগ্রহ জন্মায়নি, এ রকম কোনো আগ্রহ এখনও তার নেই। কখনই বিশ্বব্যাংকের প্রধান হওয়ার কথা ভাবেননি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বব্যাংকের একজন নিয়মিত সমালোচক হিসেবে আমি তার নীতি ও কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করে এসেছি। এই ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদটি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ করে রাখার বিষয়টিও আমার সমালোচনার বিষয়বস্তু ছিল। সামাজিক ব্যবসার প্রসার নিয়েই যে তিনি বেশি আগ্রহী- সে কথাও বিবৃতিতে তুলে ধরেছেন ইউনূস। তিনি বলেন, আশা করি অদূর ভবিষ্যতে ‘বিশ্ব সমাজিক ব্যবসা ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিশ্বের মৌলিক অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধানে এ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যদি কেউ আমাকে অনুরোধ করে, তবে সানন্দে সে দায়িত্ব নিতে আমি এগিয়ে আসব- ততদিনে আমার বয়স যতই হোক।
উল্লেখ্য, ২২ ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের কাছে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেন।