দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে চলছিল লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠান (টকশো)। এতে অংশ নেওয়া অতিথিদের মধ্যে ছিলেন এক নারী সাংবাদিকও, একজন ইসলামপন্থী সিনেট সদস্য ওই সাংবাদিককে ধর্ষণের হুমকি দেন।
ওই টকশোতে ইসলামপন্থী সদস্য ছাড়াও একজন ব্যারিস্টারও ছিলেন।
নিউজ ওয়ান চ্যানেলে প্রচারিত সরাসরি ওই অনুষ্ঠানে আলোচনার এক পর্যায়ে ওই নারী সাংবাদিককে ধর্ষণের হুমকি দেন ওই সিনেট সদস্য। টেলিভিশনে সেই দৃশ্য সরাসরি দেখেছেন লাখ লাখ দর্শক।
নিউজ ডট কম ডট এইউ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘টেন পিএম উইথ নাদিয়া মির্জা’ শিরোনামের ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী সাংবাদিক মারভি সারমেদ, জামায়াত উলামা-ই-ইসলামের রক্ষণশীল সিনেট সদস্য হাফিজ হামদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার মাসরুর সাহিব।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে বেড়ে যাওয়া ‘অনার কিলিং’ নিয়ে সেদিন আলোচনা করছিলেন টক শোর অতিথিরা।
আলোচনার একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মাসরুর অনার কিলিংয়ের বিষয়ে দেশটির ইসলামপন্থী নেতাদের চুপচাপ থাকার কথা তুলে কটাক্ষ করেন। এই কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হামদুল্লাহ।
এরপর আলোচনায় যোগ দেন মারভি সারমেদ। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু ব্যাপারে তিনিও ব্যারিস্টার মাসরুরের সঙ্গে একমত। এই সময় এই সাংবাদিককে মাঝপথে থামিয়ে দেন সিনেটর হামদুল্লাহ। শুরু হয় বিষয়টি নিয়ে তুমুল আকারে তর্ক-বিতর্ক।
এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মারভি বলেন, “তিনি ভীষণ খারাপ সব শব্দ ব্যবহার করে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে দেন। তিনি আমাকে বেশ্যা বলে গালি দেন। বলেন, ‘তোমার পায়জামা খুলে দেবো এবং তোমার মায়েরও পায়জামা খুলে দেবো’।”
এইসব কথার প্রতিবাদে যখন ওই নারী সাংবাদিক হামদুল্লাহকে বলেন যে, ‘এসব নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে করুন,’ তখন তাঁকে মারতে আসেন হামদুল্লাহ। এ সময় ওই সিনেটরকে সরিয়ে দেন একজন নিরাপত্তারক্ষী। তা না হলে মারভির মুখে লেগে যেতো তার চালানো ঘুষি!
মারভি বলেন, ওই ধর্ম ব্যবসায়ী যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন তিনি আবার রোজাও রেখেছিলেন!
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সিনেট চেয়ারম্যান রেজা রাব্বানিকে হামদুল্লার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মারভি। সেই সঙ্গে নিউজ ওয়ান চ্যানেলকে এই অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করতেও অনুরোধ করেছেন।
নিউজ ডট কম ডট এইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের সমাজে নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষত স্ত্রী ও মেয়েদের এখানে পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অনার কিলিং, এসিড-সন্ত্রাস, নববধূকে আগুনে পোড়ানো, বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানির মতো ঘটনা এখানে খুব স্বাভাবিক। সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার হলো, এসব অপরাধের বেশির ভাগই আইনের বাইরে থাকে। জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য সূচকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৭ তম।